শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৯, ১১ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখা গেছে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীতে। টানা বৃষ্টির পাশাপাশি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতায় এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কুমিল্লাতে ১১ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ফেনীতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানির নিচে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়ক। দেড় লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
নোয়াখালীর মাইজদী ও চৌমুহনী শহরের পাড়া-মহল্লা, এমনকি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়কও হাঁটু পানি ডুবেছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় অন্তত ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রে।
এদিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় জমেছে পানি, ছাদ থেকে পড়ছে টপটপ পানি। আগমনী গেট থেকে শুরু করে পার্কিং এরিয়ায় যাত্রীদের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বালতি, ট্রে, টব ব্যবহার করে পানি সরানোর চেষ্টা চালায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটেও শহরের প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে। জেলার তিন উপজেলায় পানিতে তলিয়ে গেছে অন্তত ৯০০টির বেশি চিংড়ি ঘের ও পুকুর। জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক খামারে মাছ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ১২ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড হাঁটুপানিতে ডুবে আছে। পাহাড়ি এলাকায় ধসের ঝুঁকিতে মাইকিং শুরু করেছে প্রশাসন। নামারবাজার, শেখপাড়া, দাসপাড়া এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। পাশাপাশি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানও পানির নিচে চলে গেছে।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে আশপাশের ফসলি জমি ও বসতি তলিয়ে গেছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার ও শুকনা খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
যশোরের অভয়নগরেও একই চিত্র। সেখানে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলো ভরে গেছে বৃষ্টির পানিতে। নওয়াপাড়া পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামে ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমনের বীজতলা ও মরিচের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। জেলা ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বীজতলা যদি দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকে, তাহলে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে, যা উৎপাদন চক্রে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। যদিও বড় ধরনের নদীভাঙন বা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা আপাতত নেই, তবে নিম্নাঞ্চলের অবস্থা বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
এই মুহূর্তে চরম দুর্ভোগে আছেন কয়েক লাখ মানুষ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে বর্ষার এই চাপ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার ওপরও বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/বিডি