পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশের ক্ষমতায় থাকা প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই কোনো না কোনো সময় যুক্ত ছিলেন। এই কারণে এলাকায় তিনি ‘সুযোগসন্ধানী নেতা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং নানা সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের হওয়া এক মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামিও হন।
তবে এবার অন্যান্য বড় দলের মনোযোগ না পেয়ে নতুন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (চরমোনাই) হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামতে চাইছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই মঠবাড়িয়া জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন গুঞ্জন ও সমালোচনার ঝড়। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ একাধিক দলে সক্রিয় ছিলেন। জেতার চেয়ে হারের সংখ্যা বেশি হলেও এই আসন থেকে কয়েক দফায় সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২১ মার্চ মঠবাড়িয়ার উত্তর সোনাখালী গ্রামে জন্ম নেওয়া ডা. রুস্তম আলী ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও পরে ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে খেজুরগাছ প্রতীকে প্রথমবার ভোটে অংশ নেন এবং জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পরাজিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন পান্নার কাছে হারেন। ১৯৯৬ সালের প্রথম নির্বাচনে জাপা (এরশাদ) প্রার্থী হয়ে বিএনপির জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের কাছে ফের পরাজিত হলেও একই বছরের দ্বিতীয় নির্বাচনে তিন মাস পর জয় পান এবং প্রথমবারের মতো এমপি হন।
২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের ডা. আনোয়ারকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে ফের জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ডা. আনোয়ারের কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিতর্কিত নির্বাচনে জয় পেয়ে জাতীয় হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে আবারও জয় পান। তবে ২০২৪ সালে জাপা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুর রহমানের বড় ভাই শামীম শাহনেওয়াজের কাছে হেরে যান।
তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বারবার দলবদলের কৌশলই মূল হাতিয়ার ছিল। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে তিনি কখনো সরকারবিরোধী দলের, কখনো সরকারপক্ষের ভেতরের অংশের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে জেতার পথ সুগম করতেন। মোট ৯টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ৪ বার জয়ী ও ৫ বার পরাজিত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করিমের সঙ্গে হাতপাখা প্রতীক ধরে থাকা ডা. রুস্তম আলীর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে জানা যায়, তিনি এবারের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হতে চান। এ খবরে মঠবাড়িয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও শুরু হয়েছে তার রাজনৈতিক ডিগবাজি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।