শিরোনাম
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৩৮, ১০ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ-কোরিয়া ম্যাচ
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে মোট ৩২ দল আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলছে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা তিন রানার্স-আপ আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মূল পর্বে অংশগ্রহণ করবে। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ যদি কোরিয়ার বিরুদ্ধে ড্র করতো, তাহলে তারা এইচ গ্রুপের শীর্ষস্থান অর্জন করে মূল পর্বে যাওয়ার সুযোগ পেত। কিন্তু পাঁচ গোলের ব্যবধানে হারের ফলে তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ এখন ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে এবং গোল ব্যবধান -৫। ফলে সেরা রানার্স-আপ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গ্রুপের অন্য ম্যাচের ফলাফলের ওপর এখন নির্ভর করছে বাংলাদেশের মূল পর্বে যাওয়া।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ কোরিয়ার বিরুদ্ধে চমৎকার ফুটবল খেলেছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাত্র তিন মিনিট পর কোরিয়া গোল করে এগিয়ে যায়। এরপর পুরো দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলাদেশ একেবারে ছিটকে পড়ে। ফুটবলাররা যেন খেলায় মনোযোগ হারিয়ে বসেছিল। দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা নিজেদের অর্ধেকেই অবস্থান করে ছিল। কোরিয়া ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে গোলের ব্যবধান বাড়িয়েছে। ৬১ মিনিটে একটি সংগঠিত আক্রমণে কোরিয়ার অধিনায়ক চো হেং আগুয়ান গোলরক্ষক স্বর্ণাকে পরাস্ত করে দলকে এগিয়ে দেন। দ্বিতীয় গোলটিও একই রকম আক্রমণ থেকে আসে।
বাংলাদেশের কোচ পিটার বাটলারের উচ্চরেখার (হাই লাইন) ডিফেন্স কৌশল আজ কার্যকর হয়নি, যা কোরিয়া তাদের শক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে দুই খেলোয়াড় বদলের পরেও ম্যাচের দিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি বাটলার।
৮৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার কোরিয়ান ফরোয়ার্ডকে ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টি দেন। কোরিয়ার অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে গোল করে স্কোর ৪-০ করেন। ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে বাংলাদেশ আরও দুই গোল খেয়ে ১-৬ ব্যবধানে হেরে যায়। লাওসের ভিয়েনতিয়েনে বাংলাদেশের এই ম্যাচের ফলাফলের ধারা যেন দুঃস্বপ্নের মতো।
তবে দিনের শুরুতে বাংলাদেশ দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাসে খেলেছিল। খেলা শুরু হতেই প্রথম আক্রমণ করেছিল তারা। ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা প্রথম মুহূর্তেই গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন, যদিও কোরিয়ার গোলরক্ষক আগাম বাইরে এসে সেই সুযোগ রক্ষা করেন।
১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে সাগরিকা ও শান্তি মারডি বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। শান্তি মারডি বল সামনে ছাড়লে শ্রমতী তৃষ্ণা রাণী সুযোগ নিতে দেরি করেননি এবং বল জালে পাঠিয়ে দলকে এগিয়ে দেন। লাওসের স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীরা উচ্ছ্বাসিত হয়েছিলেন। যদিও এটি ছিল মাত্র একটি গোল, তবে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলের জালে গোল করা ছিল বড় অর্জন।
কিন্তু ১৮ মিনিটের মধ্যেই কোরিয়া গোল করে সমতা ফিরিয়ে আনে। পিটার বাটলারের অধীনে বাংলাদেশ দলের রক্ষণাত্মক কৌশল ছিল হাই লাইন ডিফেন্স, যেখানে সেন্টার লাইনের একটু নিচে থাকা বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের টানা লম্বা বলের মাধ্যমে ছাড়িয়ে দেয় কোরিয়ার দ্রুতগামী ফরোয়ার্ডরা, যাদের পেছনে ফেলে গোলরক্ষককে একা রেখে গোল করে।
ম্যাচের পরবর্তী সময়ে কোরিয়া বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। এসময় বাংলাদেশের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার কিছুটা চাপে থাকলেও ঠাণ্ডা মাথায় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণী বেশ কয়েকবার দুর্দান্ত রক্ষণ করেছেন। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের শেষ মুহূর্তে তিনি পোস্টের কাছ থেকে এগিয়ে এসে কোরিয়ান ফরোয়ার্ডের শট প্রতিহত করেন। কোরিয়ার ফরোয়ার্ডরাও একাধিক গোল মিস করেছেন।
বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার প্রথমার্ধেই দুই খেলোয়াড় পরিবর্তন করেন। গত ম্যাচে অলিম্পিক গোল করা শান্তি মারডিকে ২৫ মিনিটের মধ্যে পরিবর্তন করা হয়। কোরিয়াও একটি পরিবর্তন আনে। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে এবং রক্ষণাত্মক অবস্থান নেনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ছন্দহীনতা দেখা দেয়, যা শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলের এই পারফরম্যান্স থেকে দেখা যায়, শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে আরও বেশি প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। এশিয়ার শীর্ষে উঠতে হলে খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং প্রতিপক্ষের শক্তি মোকাবেলায় কৌশলগত উন্নয়ন জরুরি।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে