কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মাছ আমদানি গতকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন এবং সরকারেরও বড় অংকের রাজস্ব আয় কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, এনবিআরের অনুমতি ছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অনিচ্ছুক থাকলেও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, অনিয়ম রোধের জন্য নতুন কিছু নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে।
গত অর্থবছরে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ভারত থেকে মাছ আমদানি প্রায় ১৮ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন কমেছে। ব্যবসায়িক সূত্র জানায়, ভারত থেকে আমদানি হওয়া খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বরফায়িত মিঠা পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছের অংশ বড়। সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে কেজি প্রতি শুল্ক ৫০ সেন্ট (প্রায় ৩৮ টাকা) হলেও বেনাপোল কাস্টমস এখন ৭৫ সেন্ট আদায় করছে, যা আমদানিকাদের জন্য অতিরিক্ত ২৫ সেন্ট (প্রায় ২০ টাকা) ব্যয় বাড়িয়েছে।
তা ছাড়া, আমদানিকৃত মাছের মধ্যে বরফায়িত পণ্যের ধরন নির্বিশেষে ৮০ শতাংশ মিঠা পানির মাছ ও ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ হিসেবে শুল্ক নেওয়া হচ্ছে। মিঠা পানির মাছের শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে কেজি প্রতি ৭৬ টাকা এবং সামুদ্রিক মাছের জন্য ৪৬ টাকা। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ ছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চাকার সংখ্যা অনুযায়ীও শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা আরো এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে।
বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মির্জা রাফেজা সুলতানা এ বিষয় তদারকি করেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাছ আমদানি বন্ধ রেখেছেন।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে, বরফায়িত মাছের ওজন নির্ণয় ও সঠিক রাজস্ব আদায়ের জন্য নতুন নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কারো যদি অভিযোগ থাকে, তবে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।
মাছবাহী ট্রাক চালক রাহুল জানান, আমদানি বন্ধ থাকায় দু’দিন ধরে তিনি বন্দরে অপেক্ষা করছেন। বেনাপোল বন্দরের শ্রমিকরাও মাছ আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন, কারণ ইতোমধ্যে বন্দরের পণ্য আমদানি-রফতানি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আসে মাছ আমদানির মাধ্যমে। কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আমদানি খরচ বাড়ায় বাধ্য হয়ে আমদানিকারীরা মাছ আমদানি বন্ধ রেখেছেন।
বেনাপোল ফিসারিজ কোয়ারেন্টাই কর্মকর্তা আসওয়াদুল আলম জানান, গতকাল থেকে কোন মাছ ভারত থেকে আমদানি হয়নি, তবে মাছবাহী ট্রাক আসলে দ্রুত খালাসের সব ব্যবস্থা রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, তিনি সম্প্রতি পদায়ন পেয়েছেন এবং মাছ আমদানিতে নতুন শুল্ক বা নিয়ম চালুর বিষয়ে তার জানা নেই। তবে বরফায়িত মাছের ওজন নির্ণয় ও সঠিক রাজস্ব আদায়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাননি।