শিরোনাম
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:০৭, ১২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪৯, ১২ এপ্রিল ২০২৫
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এবার চার মাস বারো দিন পর দান বাক্স খোলা হয়েছে এবং ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা টাকা গণনার কাজ করছেন।
এর আগে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল এবং গণনা শেষে রেকর্ড ভেঙে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল, যা ২৯ বস্তা পূর্ণ ছিল। প্রায় ১০ ঘণ্টায় ৪০০ জনের একটি দল এই টাকা গণনার কাজ শেষ করেছিলেন। সেই সময় স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা এবং রুপার অলংকারও পাওয়া গিয়েছিল।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯টি দান বাক্স খোলা হয়েছে। বাক্সগুলো খুলে ৩০টি বস্তায় ভরে টাকা গণনার জন্য মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে গণনার কাজ চলছে।
টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ মাদ্রাসার ২৮৫ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৮০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের খতিব, স্থানীয় বাসিন্দা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনের বিশ্বাস, এই মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূরণ হয়। এই ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এখানে দান করে থাকেন।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, একসময় কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদের মাঝে একটি উঁচু টিলার মতো স্থান জেগে ওঠে। ওই স্থানে এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল। মুসলিম ও হিন্দুসহ সকল ধর্মের মানুষের আনাগোনা ছিল সেই সাধকের আশ্রমে। সেই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর এলাকাবাসী তার উপাসনালয়কে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
তবে সেই সাধকের দেহত্যাগের পর থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে এলাকার এবং দেশের দূর-দূরান্তের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত বা দান করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় – এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ নানা ধর্ম ও বর্ণের নারী-পুরুষ এই মসজিদে মানত নিয়ে আসেন। তারা নগদ টাকা-পয়সা, সোনা ও রুপার গহনার পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বিদেশি মুদ্রাও দান করেন।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির উপর এই মসজিদটি নির্মিত হলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর বিস্তৃত। মসজিদের পরিধির সাথে সাথে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করা এই মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক খাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের একটি সুন্দর ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং এর নামকরণ করা হবে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স। এটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।