শিরোনাম
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১:৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ কথা বলেছেন।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আমার ধারণা নীলফামারীতে দুর্নীতির প্রকোপ কম। কিন্তু আমি ঢাকার অবস্থা যেটা দেখি সেটা বেশ বেশি। যেখানে প্রকোপ কম সেটাকে একটা মডেল জেলা হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। আমি আশা করব একটা সময় আপনারা নিজেরাই ঘোষণা করবেন নীলফামারী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।
দুুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মধ্যে এখন যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা, আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না? আমাদের দেশের দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষ যদি টাকা পয়সা থাকে, যদি আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পারে, তাহলে খুব সন্তুষ্ট থাকি তাদের ওপরে। আমরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষদের একটু ঘৃণা করতে না পারি তাহলে কিন্তু এই সংকটটা খুব সহজে যাবে না। যেটা আপনারাই শুরু করুন যে ঠিক আছে আমরা দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলবো।
দুর্নীতি রুখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা রয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের যে কাজগুলো, এগুলো কিন্তু ব্যক্তিগত কাজ না। প্রাতিষ্ঠানিক কাজ। প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে। তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেনো আসবে? প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান পর্যন্ত হচ্ছে শেষ দোষ। তারপরও আইনগত কিছু বিষয় আছে যেগুলো অনেক সময় আদালতে চলে যায়। এটা ছাড়া আমি তো মনে করি, আজকে যে অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে, এর দুয়েকটা ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখানে আসার কোনো কারণ ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, আমরা কর্মকর্তাবৃন্দ যারা সেবাদাতা বলে নিজেদের দাবি করি। আসলে জনগণের অর্থে আমাদের বেতন হয়, আমরা বড় চেয়ারে বসি, ভালো পোশাক পরি। আমাদের সেই কমিটমেন্ট থাকা দরকার। সেই প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। আমরা যেন তাদের (জনগনের) ঋণ শোধ করতে পারি।
ভবিষ্যতে দুর্নীতি বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অন্তর্র্বতী সরকার প্রধান মনে করেন, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কিভাবে নিরসন করা যায় তার পিছনে। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয় সেটা রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয় আমি, আপনি আমরা সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকাবার জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি তাহলে কি দুর্নীতি দূর হবে না?
গণশুনানীতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে দুইটি আদালতে রয়েছে, কয়েকটি অপ্রাসাঙ্গিক ও ৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউল গনি ওসমানীকে পঞ্চপুকুর শাহ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে অপসারনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ইএফটি ও এফপিও সংশোধনের জন্য অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাকেও অপসারনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গনশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান। এসময় জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয় গণশুনানিতে।
এ সময় অভিযুক্তদের অনেকের উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ লিখিতভাবে এই ৮১টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সেই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধারণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ