শিরোনাম
প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশ: ১২:৪৯, ২২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৮, ২২ এপ্রিল ২০২৫
লুৎফুল আবেদীন লুৎফর । ছবি: সংগৃহীত
এর আগে তার বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য ও এক নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, লুৎফরকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে দেড় বছর আগে বরখাস্ত করা হলেও নিয়মিত বেতন ভাতা তুলে নিচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, গত ২০২৩ সালের ২৪ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়ন এলাকার শেখ শহিদুল উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, নাইট গার্ড ও আয়া পদে নিয়োগ দিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ সময় ডিজির প্রতিনিধি, মাদারীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার উপস্থিত ছিলেন। তবে পরীক্ষার আগে আয়া পদে নিয়োগ দিতে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধান শিক্ষক লুৎফর চাকরী দেওয়ার কথা বলায় সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পূর্ব চিরাইপারা গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লাভলী শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা দেন। এরপর থেকে চার বছর ধরে তিনি স্কুলে বিনা বেতনে কাজ করেন। কিন্তু লাভলী পরীক্ষায় পাস করলেও বেশি টাকার বিনিময়ে ওই পদে ঝাউদি ইউনিয়নের গুহাতলা গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও নিজাম শিকদারের মেয়ে মর্জিনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরী না পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাভলী।
অপরদিকে অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, নাইট গার্ড পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্য করেন শিক্ষক লুৎফর। টাকার নিরাপত্তা বাবদ ৪ জনকে ব্যাংকের চেক দেন তিনি। পরে চাকরি দিতে না পারায় ও টাকা ফেরত না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। এর পরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান লুৎফর।
পরবর্তীতে কাজী আলমগীর হোসেনের দায়ের করা ২৫ লাখ টাকার মামলায় লুৎফরকে এক বছরের কারাদণ্ডসহ ৪টি এনআই অ্যাক্টের মামলায় ওয়ারেন্ট আদেশ দেয় আদালত। এ সকল ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক পদ লুৎফরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মাদারীপুর দুদক কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঝাউদি শেখ শহিদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরী দেওয়া কথা বলে কাঞ্চন মোল্লা, ইয়ামিন মোল্লা, আল আমিন হাওলাদার, কাজী আলমগীর হোসেন, লাভলী আক্তার, কুলসুম আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও বিল্লাল শিকদারসহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক লুৎফর।
গত ২৪/০৬/২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরিক্ষায় চাকুরী থেকে বঞ্চিত হন ওই ৮ জন চাকুরী প্রার্থী। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে গণশুনানি, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তারা তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন। ঘুষ প্রদানের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক চেকসহ অডিও, ভিডিও রেকর্ড রেখে দেন ভুক্তভোগীরা৷ তাদের অভিযোগ বর্তমানে বেতন কাঠামো (EFT) চালু হওয়ার সুযোগ নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন এক বছরের সাজাপ্রাপ্তসহ একাধিক মামলার আসামি ও বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক লুৎফর। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এক চাকরী প্রার্থী নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ইয়ামিন মোল্লা ও কাঞ্চন মোল্লা জানান, অফিস সহকারী পদে চাকরী দেওয়ার কথা বলে তাদের দুইজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক লুৎফর। কিন্তু তাদেরকে চাকরী দেননি তিনি। একপর্যায়ে টাকা ফেরত না পেয়ে তার দেওয়া ব্যাংক চেক দিয়ে এনআই এক্টে মামলা দায়ের করেন কাঞ্চন। তবে ইয়ামিনের কাছে কোন প্রমাণাদি না থাকায় মামলা করতে পারেনি। এ ঘটনায় ঘুষ বানিজ্যকারীদের কঠোর শাস্তি ও টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন জানান, একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি লুৎফরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। এসআই ইব্রাহীমের প্রচেষ্টায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। তিনি একটা মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ