ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

চাহিদার শীর্ষে ‘রেড চিটাগাং’

রাঙামাটি প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২০:১০, ৪ জুন ২০২৫

চাহিদার শীর্ষে ‘রেড চিটাগাং’

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনি বাজার এখন গরুর হাটে জমজমাট। এই বাজারটি জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি পশুর হাট।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে হাটে গরুর আমদানি ও বিক্রি বেড়েছে। গত এক মাস ধরে প্রতি হাটে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ গরু। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ের দেশি জাতের গরু। এই জাত স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘রেড চিটাগাং’ নামে।

খামারিরাও বেশি লালন করেন এই জাতের গরু। এই গরু দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি সুগঠিত। এদের মাংস সুস্বাদু। চর্বির পরিমাণ কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো।
সবচেয়ে বড় বিষয়—এরা রাসায়নিকমুক্ত পরিবেশে বড় হয়।

মাইনি বাজার থেকে পাইকাররা গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন হাটে। অনেকে আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য।

খামারি আলমগীর হোসেন জানান, এবার তাঁর খামারে ছিল ১৪টি গরু। এর মধ্যে ১২টি এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। দাম পেয়েছেন বলে তিনি সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, গরুকে শুধু স্থানীয় ঘাস খাওয়ান। তাই এদের শরীর ভালো হয়, চর্বিও কম থাকে।

রাঙামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার দিদারুল আলম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই ১৫-২০টি ট্রাকে গরু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনেক ব্যবসায়ী একসঙ্গে ১৫-২০টি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কোরবানির হাটে।

গরু ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন জানান, তিনি বরকলের এরাবুনিয়া থেকে ১৪টি গরু কিনেছেন। এগুলো রাঙ্গুনিয়া নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। তিনি মনে করেন, দাম ভালো পাবেন।

আরেক ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ জানান, মাইনি ও সুবলং হাটে গরুর দাম কিছুটা কম হলেও, গাড়ি ও নৌভাড়া বেশি হওয়ায় লাভ খুব একটা হয় না। এ পর্যন্ত তিনি দুই গাড়ি গরু চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করেছেন।

বরকল থেকে গরু নিয়ে আসা সুনীতি চাকমা বলেন, তিনি নিজেই গরু লালনপালন করেন। গরুগুলো সারাদিন খোলা মাঠে ঘাস খায়। বাসায় ফেরার পর দেওয়া হয় গমের ভূষি ও চালের কুড়া। কোনও ইনজেকশন বা কৃত্রিম খাবার দেওয়া হয় না। তাই এই গরুর মাংস সুস্বাদু ও নিরাপদ।

পৌর ট্রাক টার্মিনালের কোরবানি হাটে দেশি জাতের গরুই বেশি। বিক্রেতা মো. আজগর আলী জানান, তিনি পাঁচটি গরু এনেছেন। এর মধ্যে চারটি বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি একটি নিয়েও অনেকেই দরদাম করছেন।

ক্রেতা ফরিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তাঁর বন্ধু ও আত্মীয়রা পাহাড়ি গরু কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই তিনি হাটে এসেছেন দাম যাচাই করতে। তবে মনে করছেন, দাম একটু বেশি।

এদিকে, ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, বেশি সংখ্যায় গরু জেলাসংগতভাবে বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম বেড়েছে। তাদের দাবি, কোরবানির সময় অন্তত জেলার বাইরে গরু পাঠানো সীমিত রাখা হোক।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. তুষার কান্তি চাকমা বলেন, ‘রেড চিটাগাং’ গরুর চাহিদা বেশি কারণ এটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। এই জাতকে আরসিসি গরুও বলা হয়।

তিনি জানান, এবার কোরবানির জন্য জেলায় পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৬৮,৮৬০টি। এর বিপরীতে ৬২,৮৮৩টি পশু প্রস্তুত আছে বিভিন্ন খামার ও ঘরে। জেলায় মোট ১৯টি হাটে পশু কেনাবেচা চলছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

আরও পড়ুন