শিরোনাম
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০:২৭, ২৩ জুন ২০২৫
গত ২০ জুন রাতে সদর উপজেলার বুড়িরঘাট এলাকায় মেঘনা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। পরদিন জামাকাপড় ও ছবি দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন ইপ্সিতার বাবা মাসুদ রানা।
ইপ্সিতার পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ১৭ জুন ইপ্সিতা ‘টিউশনি করতে যাচ্ছেন’ বলে বাসা থেকে বের হন। এরপর কর্ণফুলী-৪ নামের একটি লঞ্চে ‘জসিম’ নামে এক ব্যক্তির বুকিং দেওয়া কেবিনে অবস্থান নেন তিনি। সেখানে মোবাইলে কারও সঙ্গে উত্তেজিতভাবে কথাবার্তার পর হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দেন বা তাকে ফেলে দেওয়া হয়—এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লঞ্চের এক নারী যাত্রী ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি জানাজানির পর মুন্সিগঞ্জে পুলিশ দুইজন লঞ্চ স্টাফ ও ঐ নারী যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। তবে প্রমাণের অভাবে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইপ্সিতার বাবা মাসুদ রানা বলেন, “আমার মেয়ে কেন ঢাকাগামী লঞ্চে উঠেছিল, সেটা এখনও অজানা। তবে লঞ্চের কেবিনে ‘জসিম’ নামে একজনের নামে বুকিং ছিল, যার সঙ্গে সে কথা বলেছিল। আমার বিশ্বাস, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মেয়ের মোবাইল ট্র্যাকিং ও কললিস্ট বিশ্লেষণ করলে সব কিছু জানা সম্ভব। আমি চাই, সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীদের বিচার হোক।”
উদ্ধারের সময় মরদেহে কালচে দাগ ও আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আজিজুল হক। একই কথা জানিয়েছেন সদর থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ। ওসি বলেন, “নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।”
কর্ণফুলী-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু বলেন, “ইলিশা ঘাট ছাড়ার পর কালিগঞ্জ অতিক্রম করে কিছু দূর গেলে জানতে পারি, এক তরুণী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। এরপর উদ্ধারচেষ্টা চালালেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
লঞ্চের নিয়ন্ত্রক ব্রাদার্স নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন বলেন, “ঘটনার পরই লঞ্চ ঢাকায় পৌঁছে। এর আগেই এক নারী যাত্রী ৯৯৯-এ ফোন করে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন, যা তদন্তসাপেক্ষে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।”
মেঘনার স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সুকর্না আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যু কেবল একটি মেয়ে হারানোর গল্প নয়—এটি একটি পরিবারে অজস্র প্রশ্ন ও দীর্ঘশ্বাসের শুরু। পরিবারের অভিযোগ, এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। প্রশাসনের তদন্ত এখন তাদের একমাত্র ভরসা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ