ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

রাঙামাটির পাহাড়ে দেখা মিলল বিরল ‘গোলাপি রঙের হাতি’

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২:৩৮, ২৪ জুন ২০২৫

রাঙামাটির পাহাড়ে দেখা মিলল বিরল ‘গোলাপি রঙের হাতি’

রাঙামাটির বরকল উপজেলার দুর্গম বরুণাছড়ি পাহাড়ে দেখা মিলেছে এক বিরল রঙের বন্য হাতির শাবক। মাত্র দুই মাস বয়সী এই শাবকটির গায়ের রঙ অন্যান্য হাতিদের মতো গাঢ় ধূসর নয়, বরং গোলাপি। এমন বিরল রঙের হাতি বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।

গত ১৩ জুন বরুণাছড়ি এলাকায় বন বিভাগের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)-এর সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম হাতির একটি দলকে কাপ্তাই হ্রদ পার হতে দেখেন। ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে তিনি চোখে পড়েন এই গোলাপি শাবকের। ভিডিওটি পাঠানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সাড়া ফেলে।

জানা গেছে, হাতির ওই দলে মোট আটটি সদস্য রয়েছে — এর মধ্যে পাঁচটি প্রাপ্তবয়স্ক, একটি কিশোর এবং দুটি শাবক। গোলাপি রঙের শাবকটি সবচেয়ে ছোট এবং পুরুষ। শাবকটির মা স্বাভাবিক রঙের হলেও দলের নেত্রী হাতিটির শুঁড় ও মাথার কিছু অংশে গোলাপি রঙের উপস্থিতি রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার ভিডিও দেখে আমি নিজেই শাবকটি দেখতে যাই এবং সরেজমিনে বিষয়টি নিশ্চিত হই। বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছেন।’

বিজ্ঞান কী বলছে?

বন্যপ্রাণী গবেষকদের মতে, হাতির শরীরের চামড়ায় রঞ্জক পদার্থ (মেলানিন) তৈরি না হলে চামড়ার রঙ ফ্যাকাসে বা গোলাপি হতে পারে। এটি একটি জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, যা অনেক সময় একাধিক প্রজন্ম পর হঠাৎ প্রকাশ পায়।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমা বলেন, ‘জিনগত কারণে এমন রঙের হাতি হওয়া অস্বাভাবিক নয়, যদিও এটি খুবই বিরল। প্রাণী জগতে এমন ব্যতিক্রম প্রায়শই ঘটে থাকে।’

তিনি আরও জানান, ‘মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস কিংবা ভিয়েতনামে লালচে-বাদামি হাতি দেখা যায়, যাদের পানিতে ভিজলে গোলাপি মনে হয়। তবে পুরোপুরি সাদা অ্যালবিনো হাতি খুবই দুর্লভ।’

গবেষণার দাবি

বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন জানান, ‘শাবকটি কিছুটা সাদা প্রকৃতির, তবে ভেজা শরীরে রঙটা গোলাপি দেখায়। কেন এই ধরনের রঙ হয়েছে, তা গবেষণার বিষয়। আমরা গবেষকদের সহযোগিতা নিচ্ছি।’

তিনি আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় তিনটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। ৪৬ জন সদস্য হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছেন এবং এই শাবকটিকেও বিশেষ নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গোলাপি রঙের হাতির দেখা পাওয়া নিঃসন্দেহে বিরল ও চমকপ্রদ ঘটনা। গবেষকরা বলছেন, এটি প্রাকৃতিক জিনগত বৈশিষ্ট্যের ফল এবং ভবিষ্যতে এই শাবকটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন