শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:২০, ২৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২২:২২, ২৪ জুন ২০২৫
প্রথমবারের মতো তেল পরিশোধন কেন্দ্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, হাসপাতাল ও স্টক এক্সচেঞ্জকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা চালায় ইরান।
তেল আবিবের ‘কিরিয়া মিলিটারি কমপ্লেক্স’—যেটিকে ইসরায়েলের পেন্টাগন বলা হয়—সেখানে রয়েছে আইডিএফ, মোসাদ ও শিন বেটের সমন্বয়কেন্দ্র, এআই-চালিত ওয়ার রুম, সাইবার ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টার ও ইউনিট ৮২০০-এর ঘাঁটি। ১৩ জুন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের একাধিক আঘাতে এই স্থাপনার সুরক্ষা ভেদ করে প্রবেশ করে। সাধারণ ইসরায়েলিদের কাছে এটি ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার প্রতীক।
১৪–১৫ জুন রাতে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাজান তেল পরিশোধন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাইফাসহ আশপাশের শহরগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতির মুখে পড়ে। হাসপাতাল ও পানি পরিশোধন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, বন্দর এলাকার পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হয়।
১৫ জুন রেহোভতের ভিজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে চালানো হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা, জেনেটিক্স এবং প্রতিরক্ষা গবেষণার মূল স্থাপনা। গবেষণা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়; নিরাপত্তার অভাবে বিদেশি গবেষকদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
২০ জুন ইরানি মিসাইল গাভ-ইয়াম নেগেভ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পার্কে আঘাত হানলে সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট, গবেষণাগার ও ডেটা সার্ভারে ধ্বংস ঘটে। এতে বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন টেক কোম্পানির কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
১৯ জুন তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে ইরানি ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত করলে অর্থনৈতিক কেন্দ্রটিতে বড় ধ্বংস ও ৩২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই হামলা ইসরায়েলের অর্থনীতির ওপর সরাসরি ধাক্কা দেয়।
সোরোকা মেডিকেল সেন্টার—দক্ষিণ ইসরায়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র—১৯ জুন ইরানি সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য হয়। এতে ভবনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রাসায়নিক লিকের শঙ্কা তৈরি হয়।
১৫ জুন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস পরিচালিত অস্ত্র কারখানায় আঘাত হানে। এর কয়েকদিন পর, ২২ জুন নেস জিওনায় অবস্থিত গোপন জৈব অস্ত্র গবেষণাগার—ইসরায়েল ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চেও হামলা হয়। এটি ইসরায়েলের ‘অদৃশ্য প্রতিরক্ষা বলয়’ হিসেবে বিবেচিত।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের মূল বিমানবন্দর বেন গুরিয়ানের রানওয়ে ও লজিস্টিক ভবন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিমান চলাচল কয়েক ঘণ্টার জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়।
তেল আবিব, হাইফা ও রামাত গানের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে আবাসিক ভবনে বারবার হামলা হয়। একটি সাততলা ভবন ধসে পড়ে, যার ধ্বংসস্তূপ থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে দীর্ঘ সময় লাগে। ওই ভবনেই অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়।
এইসব সমন্বিত হামলা ইসরায়েলের সামরিক দুর্বলতা, কৌশলগত গাফিলতি এবং নাগরিক জীবনযাত্রার স্থিতিশীলতাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ হামলাকে অনেক বিশ্লেষকই বলছেন—ইসরায়েলের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক আঘাত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ