ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

কাতারে কেন সব সমস্যার সমাধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২:৫৪, ২৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২২:৫৫, ২৪ জুন ২০২৫

কাতারে কেন সব সমস্যার সমাধান

গাজা যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান বেশ কয়েকটি দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে কাতার ক্রমেই নিজেদের প্রভাবশালী আলোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, হামাস, তালেবান থেকে শুরু করে ইউক্রেন বা সুদান— সবখানেই আলোচনার সেতুবন্ধন তৈরি করে দোহা।

সম্প্রতি কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে। রয়টার্স এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, দোহা ও তেহরানের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমেই গাজা যুদ্ধের একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে ইরানের সম্মতি আদায় সম্ভব হয়েছে।

এর পেছনে রয়েছে কাতারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আত্মরক্ষামূলক কূটনীতি। পর্যবেক্ষকদের মতে, ছোট হলেও গ্যাসসম্পদে বিপুল ধনী এই দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপরিহার্য করে তুলতে চায়। ২০১৭-২০২১ সালে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে আরোপিত অবরোধের প্রেক্ষাপটে কাতার এখন নিজের কূটনৈতিক সক্ষমতা আরও মজবুত করতে সচেষ্ট।

দোহা থেকে তেহরান পর্যন্ত সেতুবন্ধন

গাজা যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে কাতারের ভূমিকা কেবল প্রতীকী নয়, বরং কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই দোহা ইরানকে সংযত রাখার চেষ্টা করেছে। এমনকি আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার পরপরই মধ্যস্থতামূলক যোগাযোগের খবর সামনে আসে। ফলে বোঝা যায়, কাতার কেবল পর্যবেক্ষণ করছে না, বরং সরাসরি সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে উত্তেজনা প্রশমনের কৌশল নিয়েছে।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ

তবে এই কূটনীতির পথ একমাত্র মসৃণ নয়। হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের আতিথেয়তা দেওয়ার কারণে কাতারকে "সন্ত্রাসবাদ সমর্থক" বলেও আখ্যা দিয়েছেন ইসরায়েলি জিম্মি আলোচক গার্শন বাসকিন। তার মতে, হামাসকে জিম্মি মুক্তিতে চাপ দিতে না পারলে কাতারের উচিত তাদের নির্বাসিত করা।

বাসকিন আরও দাবি করেন, কাতারের চেয়ে মিশরীয় গোয়েন্দারা হামাসের সঙ্গে কার্যকরভাবে সংলাপ করতে সক্ষম। ফলে দোহার সামনে এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ— তারা কেবল সংলাপের হোস্ট নয়, সত্যিকারের সমাধানের কুশলী কিনা, সেটাই প্রমাণের সময় এসেছে।

আদর্শ নাকি বাস্তববাদ?

কাতার সবসময় দাবি করে এসেছে, হামাসকে আশ্রয় দেওয়া তাদের আদর্শিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই তারা এটি করে। এমন অবস্থান রেড ক্রস বা সুইজারল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার দাবি রাখে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সমালোচনা করে না, কাতারও তেমনই হামাসের সমালোচনা থেকে বিরত থাকে।

সংঘাতের মাঝে উত্তেজনা কমানোর কৌশল

৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলায় কাতার সরাসরি সমর্থন দেয়নি, তবে হামলার পেছনে ইসরায়েলের দখলদার নীতিকেই দায়ী করেছে। পরবর্তী সময়ে এটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, আবার ইরানকে সংঘাত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই কাতারের কূটনীতির মূল বৈশিষ্ট্য— উত্তেজনা কমানো।

ভবিষ্যতের পথ

এই মধ্যস্থতামূলক আলোচনা কেবল যুদ্ধবিরতির বিষয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে সীমান্ত খুলে দেওয়া, সাহায্য প্রবেশে অনুমতি, চেকপয়েন্টে আচরণ এবং সহায়তা সমন্বয় সংক্রান্ত অনেক জটিল বিষয় জড়িত। যেহেতু এই যুদ্ধের পরিণতি বহু প্রজন্মের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র নির্ধারণ করবে, তাই কেউই সহজে ছাড় দিতে চায় না।

তবে একথা স্পষ্ট, কাতার এখন শুধু একটি গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ নয়, বরং কূটনৈতিক শক্তি হিসেবেও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনে কাতারের ভূমিকা আরও বড় হতে পারে— বিশেষ করে যখন বড় শক্তিগুলো সংঘাতে জড়িত থেকে আলোচনায় নামতে সংকোচ বোধ করে, তখন ‘দোহা’ হয়ে উঠতে পারে আলোচনার নতুন ঠিকানা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন