ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইরানের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম গেল কোথায়, দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:৫৩, ২৪ জুন ২০২৫

ইরানের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম গেল কোথায়, দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের বাংকারবিধ্বংসী বোমার হামলার ঠিক আগেই ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা থেকে গোপনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। এই বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব—এমনই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। ভ্যান্স বলেন, “ইরান কৌশলে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে, এবং এটি এখন তাদের কাছে পরমাণু আলোচনার টেবিলে একটি বড় চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার।”

কোথায় গেল ইউরেনিয়াম?

এই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ছিল ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মজুত। মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার আগেই সেখান থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্র এবং মার্কিন উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, হামলার কিছুদিন আগে ফোরদোর পাহাড়ঘেরা স্থাপনাটির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ১৬টি ট্রাক। হামলার পর ট্রাকগুলোর কোনো চিহ্ন মেলেনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এসব ট্রাকেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইরানের আরেক ভূগর্ভস্থ গুদামে, সম্ভবত ইস্পাহানের কাছে।

কতটা বিপজ্জনক এই ইউরেনিয়াম?

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সরিয়ে নেওয়া ইউরেনিয়াম ছিল ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ। এটি সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট না হলেও, ৯০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে তা দিয়ে তৈরি করা যায় কার্যকর পারমাণবিক বোমা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাধ্যমে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ উপাদান পাওয়া সম্ভব।

চাপ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ফোরদো স্থাপনাটি সর্বশেষ পরিদর্শন করা হয়েছিল ইসরায়েলি হামলার ঠিক এক সপ্তাহ আগে। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছেন, “পরিদর্শন যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় শুরু করা দরকার।”

তবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে সেই কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। গ্রোসি বলেন, “এই সংঘাত কূটনৈতিক সমাধানের পথ সংকুচিত করছে এবং ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র থেকে বিরত রাখার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা দুর্বল করে দিচ্ছে।”

দর-কষাকষির হাতিয়ার?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘নিখোঁজ’ ইউরেনিয়াম এখন ইরানের জন্য একধরনের কৌশলগত পুঁজি। তেহরান হয়তো এটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক আলোচনায় ‘বার্গেনিং চিপ’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ইউরেনিয়ামের এই অজানা অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কারণ, ইরান যদি ইচ্ছা করে এটিকে লুকিয়ে রেখে আলোচনার সময় নিজের সুবিধা আদায়ের উপায় হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন