ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা দায়ী; আমরা সবাই আসামি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
Scroll
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন
Scroll
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
Scroll
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার, অংশ নিবে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী
Scroll
ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে ইরান
Scroll
যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি: পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) প্রতিবেদন
Scroll
ইসরায়েল অন্তত ১৪ ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করার দাবি করেছে
Scroll
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরো ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০:৫৩, ২৫ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে পারেনি; মাত্র কয়েক মাসের জন্য এই কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে। পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্সের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মধ্যে এমন তথ্য জানালো ডিআইএ।

মঙ্গলবারের শুরুতে, ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কিছু সময় পরেই ইরানের বিরুদ্ধে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে ইসরায়েল।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির আগে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই গত শনিবার গভীর রাতে তেহরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইস্পাহানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। 

উল্লিখিত স্থাপনার ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র; যা ১৮ মিটার পুরু কংক্রিটের স্তর বা ৬১ মিটার মাটির স্তরের নিচেও বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।  

ট্রাম্প সেই সময় দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলার পরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিনজন ব্যক্তির মতে, ট্রাম্পের প্রশাসনের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে এই দাবির বিরোধিতা করা হয়েছে। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস করা হয়নি এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি, যার বেশিরভাগই মাটির গভীরে রয়েছে; মাত্র এক বা দুই মাস পেছানোর মতো ক্ষতি হয়েছে।  

ইরান দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক গবেষণা শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক শক্তি উৎপাদনের জন্য; পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য না। 

অন্য একটি সূত্র বলছে, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, হামলায় দুটি স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ভূগর্ভস্থ ভবন ধসে পড়েনি।

প্রতিবেদনের সঙ্গে পরিচিত একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, হামলার পরেও কিছু সেন্ট্রিফিউজ অক্ষত ছিল। 

এ ছাড়া মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে তাদের সপ্তাহান্তে হামলা পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষয়ক্ষতি করেছে; যা ট্রাম্পের পূর্বের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হামলার পর ট্রাম্প স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংসের দাবি করেন।

হামলার আগে ইরান তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু মজুদ সরিয়ে ফেলেছিল— এমন তথ্যও রয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

হোয়াইট হাউস অবশ্য গোয়েন্দা মূল্যায়নকে ‘পুরোপুরি ভুল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তারা ‘দুর্বল’ করে দিয়েছে, যদিও ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন সেটি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করা হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে পারমাণবিক ধ্বংসের আশঙ্কা দূর হয়েছে এবং তেহরান নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে।

‘আমরা আমাদের দুইটি অস্তিত্বগত হুমকি দূর করেছি— একটি পারমাণবিক ধ্বংসের আশঙ্কা, অপরটি ২০ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়’, বলেন নেতানিয়াহু।

অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান দাবি করেছেন, তার দেশ ‘বিপুল বিজয়’ অর্জন করে যুদ্ধ শেষ করেছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেছেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতপার্থক্য নিরসনে প্রস্তুত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলা নিয়ে ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা তথ্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, এই তথ্য ফাঁস ‘অবিশ্বাস্য রকমের অপরাধ’ এবং এর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, এটি রাষ্ট্রদ্রোহ। এর তদন্ত হওয়া উচিত। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির সব প্রতিবেদন তিনি পড়েছেন এবং তার দাবি, যেসব তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

ফোরদোর মতো গোপন স্থাপনাতেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে দাবি করে উইটকফ বলেন, আমরা সেখানে ১২টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ যদি বলে, আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি— তাহলে সেটা পুরোপুরি হাস্যকর।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও উইটকফের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করেছেন। তিনি উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘ফোরদোতে ১২টি বাঙ্কার বাস্টার ফেলা হয়েছে। ছাদ ভেদ করে ভেতর ঢুকেছে এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। কেউ যদি বলে, আমরা সফল হইনি—তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এর আগেও ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হয়তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, কেবল কিছুটা সময় পিছিয়ে গেছে। তবে ট্রাম্প এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ট্রুথ সোশ্যাল-এ আরো একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভুয়া নিউজ সিএনএন এবং ব্যর্থ নিউইয়র্ক টাইমস মিলে ইতিহাসের অন্যতম সফল এই সামরিক অভিযানের গুরুত্ব খাটো করার চেষ্টা করছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে! টাইমস ও সিএনএন— দুটোই এখন জনরোষে পড়েছে।’

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন