শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৩৮, ২৫ জুন ২০২৫
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের হামলার পর ইসরায়েল তাদের লোকজন সেখানে পাঠায়। আমার কাছে যা এসেছে, তাতে বলা হয়েছে—ফোরদোর স্থাপনাগুলো একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, তারা (ইরান) কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি, কারণ আমরা অত্যন্ত দ্রুত ও নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ হামলার ব্যাপারে বলেন, “আমাদের বোমাগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই আঘাত করেছে। আমরা যে প্রবেশপথে আঘাত হানতে চেয়েছিলাম, সেটি নিখুঁতভাবে ধ্বংস হয়েছে। ফোরদোতে ছিল ধ্বংসের এক ভয়াবহ চিত্র।”
তবে এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। দ্য গার্ডিয়ান-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ইরানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়নি। বরং হামলার ফলে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে ডিআইএ।
গোপন মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান হামলার আগেই তাদের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় একটি অংশ স্থানান্তর করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো দেশের অন্য গোপন স্থাপনাগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ফোরদোতে অবস্থিত সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রগুলো ধ্বংস না হয়ে সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়েছে এবং সেগুলো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার চালু করা সম্ভব হতে পারে।
এই মূল্যায়ন তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক কমান্ড সেন্টকমের দেওয়া প্রাথমিক যুদ্ধক্ষেত্র রিপোর্টের ভিত্তিতে। এতে ফোরদো ও অন্যান্য কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতির মানচিত্র, উপগ্রহচিত্র ও প্রতিক্রিয়াশীল ইরানি পদক্ষেপ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রকাশ্য দাবি ও পেন্টাগনের গোপন প্রতিবেদন একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কি পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে?
মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের আক্রমণ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছে—এমনটি বলার পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। বরং দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নির্ভর করবে ইরানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও তাদের বিকল্প পরিকল্পনার ওপর।
ফোরদো হামলা নিয়ে ট্রাম্পের জোরালো দাবি ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সংযত মূল্যায়নের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে রাজনৈতিক বক্তব্য আর বাস্তব গোয়েন্দা তথ্যের ব্যবধান। ফোরদো সত্যিই ধ্বংস হয়েছে কি না, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতে ইরানের কর্মপন্থা, পুনর্গঠনের সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ওপর। তবে এটুকু নিশ্চিত, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুনে ঘি পড়েছে—যার ফল এখনো পুরোপুরি অনিশ্চিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ