ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

নিউইয়র্কে ইতিহাস: প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার পথে জোহরান মামদানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১:০৭, ২৫ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২১:০৯, ২৫ জুন ২০২৫

নিউইয়র্কে ইতিহাস: প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার পথে জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক পর্বে চমক দেখিয়েছেন প্রগতিশীল নেতা জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এই বাঙালি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক নিউইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে দিয়েছেন। ৯৫ শতাংশ ব্যালট গণনা শেষে মামদানি পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ ভোট, যেখানে কুমোর প্রাপ্ত ভোট ৩৬ শতাংশ।

এই বিজয়ে নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে গেছেন মামদানি। বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর বিজয় কেবল নিউইয়র্ক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তা।

তৃণমূল পর্যায়ের সক্রিয়তা, স্বচ্ছ রাজনৈতিক বার্তা ও বামঘেঁষা নীতির মাধ্যমে মামদানি তাঁর প্রচারণাকে এক সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছিলেন। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী, ক্ষুদ্র অনুদানদাতাদের সমর্থন এবং যুবসমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দিয়েছে এই বিজয়।

উগান্ডার কামপালায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুল এবং বোডোয়েন কলেজে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ নামে একটি সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি কুইন্সে গৃহহীনদের জন্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন।

তাঁর মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার (‘সালাম বোম্বে’, ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘নেমসেক’) এবং বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী।

২০২০ সালে মামদানি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নিজেকে ‘অর্গানাইজার’ বা সংগঠক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন—চলচ্চিত্র, সংগীত ও রাজনীতি মিলিয়ে তিনি এক বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব।

নির্বাচনী প্রচারে মামদানি সরাসরি নিউইয়র্কের দারিদ্র্য, বাড়িভাড়া, খাদ্যসংকটসহ বাস্তব সমস্যাগুলোর কথা বলেন। সাবওয়ে ট্রেনে বসে ইফতার করা কিংবা আটলান্টিক নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ভাড়া বন্ধের দাবি জানানো—এমন প্রতীকী কর্মসূচি তাঁকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে।

তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, সর্বজনীন শিশু পরিচর্যা, নিয়ন্ত্রিত ভাড়া, ও শহরের নিজস্ব গ্রোসারি দোকান চালু করা। এসব উদ্যোগের ব্যয়ভার ধনীদের ওপর নতুন কর বসিয়ে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন তিনি।

যদিও নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর এই নীতিকে অবাস্তব এবং সমস্যাসংকুল বলে উল্লেখ করেছে, মামদানির সমর্থকদের কাছে এই নীতিগুলোই তাঁকে একটি আশার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্যালেস্টাইনের পক্ষে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান এবং ইসরায়েলি দাতব্য সংস্থাগুলোর করছাড় বাতিলের প্রস্তাব তাঁকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মূলধারার চেয়ে আলাদা করেছে। মামদানি বলেন, তিনি এমন কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করেন না যেখানে নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয় ধর্মের ভিত্তিতে। একইসঙ্গে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেও বলেন, তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে হতে হবে।

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর কুমো তাঁকে ‘অভিজ্ঞতাহীন ও অতিরিক্ত বামঘেঁষা’ বলে সমালোচনা করলেও মামদানির উত্থান এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং বলেছেন, “এই প্রচারণা শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি এক প্রজন্মের আবেগ, সংগঠন ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ।”

অভিবাসী, মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয়—এই ত্রিমাত্রিক পরিচয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি আজকের আমেরিকার বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন।

তিনি যদি মেয়র নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে জয়ী হন, তাহলে নিউইয়র্ক সিটি শুধু একজন মুসলিম মেয়রই পাবে না, বরং এক নতুন প্রগতিশীল রাজনীতির পথিককে পাবে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন