শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:২৬, ২৫ জুন ২০২৫
ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫৪ নম্বর বি কে টাওয়ারের ঠিকানায় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তিসারী ইনসাফ তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো সাইনবোর্ড নেই। স্থানীয়রাও দলটির নাম শোনেননি।
‘আজাদ প্রোডাক্টসের গলি’ নামে পরিচিত এ এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করা আকরাম হোসেন বলেন, ‘এই দলের নাম আপনার মুখ থেকেই প্রথম শুনলাম। কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি।’ দলের চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরেকটি দল, জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি, নয়াপল্টনের ইসলাম টাওয়ারের সপ্তম তলায় তাদের অফিস দেখিয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি থাকলেও কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই। এভাবেই গুলিস্তান থেকে মিরপুর, ধানমন্ডি থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত অনেক দল বর্ণনা দিয়েছে রাজনৈতিক কার্যালয়ের, কিন্তু বাস্তবে তারা নিখোঁজ।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ২২ ভোট পেয়েছিল বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস)। তবুও তারা এবার নিবন্ধনের আশায় ইসিতে আবেদন করেছে। ধানমন্ডির চার রুমের একটি অফিসই তাদের দলীয় কার্যালয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা মো. হাসান বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে পুরোনো দলগুলোর একটি। এবার নিবন্ধন পাবো বলেই আশা করছি।’
নতুন দলগুলোর অনেকের নেই পরিষ্কার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। কেউ কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছে দোকান বা বাড়ির চেম্বার, আবার কারও কারও কার্যালয়ের ঠিকানাই গায়েবি। অধিকাংশ দলের কোনো জেলা বা উপজেলা কমিটিও নেই।
রাজধানী গুলশান, মিরপুর কিংবা গ্রামীণ বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে রিকশাচালক—অনেকে এসব দলের নামই শোনেননি। গুলশানে মোবাইল ব্যবসায়ী ফয়সাল সরকার বলেন, ‘তিসারী ইনসাফ বা বেকার সমাজ—এই নামগুলো জীবনে শুনিনি। শুধু এনসিপির নাম কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম।’ মিরপুরের রিকশাচালক মানিক মিয়া বললেন, ‘যার নামই জানি না, তার কাছ থেকে কীই বা প্রত্যাশা?’
২০২৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৭টি দল আবেদন করেছে। তবে ইসির তদন্তে দেখা গেছে, বাস্তবে অধিকাংশ দলই অকার্যকর, অনেকেই শুধু দলীয় প্যাড জমা দিয়ে রেখেছে। অনেকে কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ না করেই আবেদন করেছে। গাইবান্ধার একটি দল—বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি, সঠিকভাবে আবেদন না করায় পুনরায় আবেদন করার জন্য সময় চেয়েছে।
নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনকারী দলগুলোর বড় অংশের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ। নেই গণভিত্তি, নেই কার্যক্রম, নেই পরিষ্কার রূপরেখা। এ পরিস্থিতিতে ইসির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—বাস্তবসম্মত দল বাছাই করা, যাতে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অঙ্গন হয় বাস্তবধর্মী ও জবাবদিহিমূলক।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ