ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ট্রাম্প উৎসব, ইউরোপীয় তোষামোদে উঠছে প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১:৫৫, ২৫ জুন ২০২৫

ট্রাম্প উৎসব, ইউরোপীয় তোষামোদে উঠছে প্রশ্ন

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলন ঘিরে যেন এক ভিন্নমাত্রার কূটনৈতিক নাটক চলছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সম্মেলনের পুরো আয়োজনেই মুখ্য লক্ষ্য— মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি রাখা। ইউরোপের নেতারা যেন একযোগে চেষ্টা করছেন তাঁকে সন্তুষ্ট করতে। এমনকি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে শুরু করে লাল গালিচা পর্যন্ত, সব কিছুতেই ছিল ট্রাম্পময়।

এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন এমন এক সময়ে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং ট্রাম্প নিজেকে তুলে ধরছেন ‘বিশ্ব শান্তির রক্ষাকর্তা’ হিসেবে। ন্যাটোর মঞ্চ তাই তাঁর জন্য হয়ে উঠেছে এক বিজয় উৎসবের ক্ষেত্র।

ইউরোপীয় দেশগুলো ট্রাম্পের বহুদিনের দাবি মেনে চলতি সম্মেলনে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অধিকাংশ দেশই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—তারা জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে, যার মধ্যে ৩.৫ শতাংশ যাবে অস্ত্র, সৈন্য ও গোলাবারুদের মতো কঠোর সামরিক খাতে এবং ১.৫ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতার মতো সফট খাতে। স্পেন ছাড়া এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রায় সবাই। একইসঙ্গে ব্রিটেন ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২টি এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান কিনবে, যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।

ট্রাম্পকে খুশি রাখতে গিয়ে ঘটেছে আরও এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মোবাইলে প্রশংসাসূচক বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প এসব বার্তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলেন, যা রুটেকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। বার্তায় রুটে লিখেছিলেন, “আপনি এমন কিছু অর্জন করতে যাচ্ছেন, যা গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারেননি।” ফাঁস হওয়া এই বার্তাগুলোর পর অনেকে রুটেকে রসিকতার ছলে ‘ট্রাম্প বিশারদ’ বলেও ডাকছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতাও এবার ট্রাম্পের রুচি ও ধৈর্য্য বিবেচনায় সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সাধারণত ন্যাটোর সম্মেলনে তিনটি বড় বৈঠক হলেও এবার তা কমিয়ে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিও মাত্র পাঁচটি অনুচ্ছেদে সীমাবদ্ধ, যা অভূতপূর্ব।

ইউক্রেন ও ইরান ইস্যুতেও এই সম্মেলনে সংযম দেখা গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হলেও মূল বৈঠকে রাখা হয়নি, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে। আর ইরান প্রসঙ্গকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক আলোচ্য তালিকায় না রাখলেও কিছু দেশ নিজেদের মতো করে তা নিয়ে কথা বলছে।

বিশ্লেষক ড্যান স্যাব্বাগ মন্তব্য করেছেন, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ট্রাম্পকে খুশি করা। তাঁর ভাষায়, “ট্রাম্প এই সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ হলেও, তিনিই আবার অস্থিরতার উৎসও।”

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—ন্যাটোর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক জোট কি এমন একজন অনিশ্চিত ও অনির্ভরযোগ্য নেতার ওপর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে রাখতে পারে? ইউরোপীয় নেতারা হয়তো এখন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের পথে হাঁটছেন, তবে জোটের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন