শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪৭, ২৪ জুন ২০২৫
ইরানের ‘সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এর গবেষক আব্বাস আসলানি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসরায়েলের অতীত ইতিহাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের দৃষ্টান্তে ভরা। এ কারণেই তেহরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়নি।”
আসলানির ভাষায়, “এই সংঘর্ষ কেবল ইসরায়েল বনাম ইরান ছিল না—এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইরানের বিরুদ্ধে যৌথ যুদ্ধ। লক্ষ্য ছিল—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস এবং দেশটিতে ‘শাসন পরিবর্তন’। তবে এই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।”
তিনি দাবি করেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর কিছু ক্ষতি হলেও কর্মসূচির মূল সক্ষমতা অটুট আছে। “জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি রয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও ধ্বংস হয়নি—বরং যুদ্ধবিরতির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইরান ইসরায়েলে পাল্টা আঘাত হেনেছে।”
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল তার সব কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে—এবং আরও বেশি। আমরা ইরান থেকে আসা তাৎক্ষণিক পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি দূর করতে পেরেছি।”
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ শাসন কাঠামোতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। এই অভিযানে মার্কিন সহায়তার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তেল আবিব।
অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ একে ‘ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এখন আমাদের লক্ষ্য গাজা—হামাসকে নির্মূল করে জিম্মিদের মুক্ত করা।”
যুদ্ধবিরতির কৃতিত্বও দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়!” এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, “এই যুদ্ধবিরতি চিরকাল স্থায়ী হবে। ইরান ও ইসরায়েল আর কখনো গোলাবর্ষণ করবে না।”
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধের ঠিক মাঝখানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এবং পরবর্তীতে তেহরানের পাল্টা জবাব একে শান্তির সূচনা নয়, বরং কৌশলগত বিরতি বলে আখ্যা দিচ্ছে। ট্রাম্পের দাবি যে বাস্তবসম্মত কি না, তা নির্ভর করছে আসন্ন দিনগুলোর ঘটনাপ্রবাহের ওপর।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি যতটা দ্রুত হয়, তত দ্রুতই তা ভঙ্গ হওয়ার ইতিহাসও বিদ্যমান। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা যেন আপাতত ঠাণ্ডা ছাইয়ের নিচে চাপা পড়েছে—তবে কখন আবার আগুন জ্বলবে, তা বলা মুশকিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিজয় কেউই পায়নি। বরং এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্র ও আঞ্চলিক আধিপত্য ঘিরে বড় ধরনের সংঘর্ষ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ