ঢাকা, রোববার, ২২ জুন ২০২৫

৮ আষাঢ় ১৪৩২, ২৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

জাতির উদ্দেশে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০:২০, ২২ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৩:১০, ২২ জুন ২০২৫

জাতির উদ্দেশে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলমান। আর এ যুদ্ধে আড়ালে থেকে ইসরায়েলকে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকা। এবার সরাসরি ইরানে হামলা চালাল আমেরিকা। এ হামলার ঘোষণা দিয়ে শনিবার (২১ জুন) রাত ১০টায় [বাংলাদেশ সময় রবিবার (২২ জুন) সকাল ৮টা] হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ভাষণ মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে। 

ঢাকা এক্সপ্রেসের পাঠকদের জন্য তার পুরো ভাষণটি দেওয়া হলো—

ধন্যবাদ সবাইকে। অল্প কিছু সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানি শাসকগোষ্ঠীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা— ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে ব্যাপক ও নিখুঁত হামলা চালিয়েছে। এই নামগুলো আমরা বহু বছর ধরে শুনে আসছি, যেখানে তারা গড়ে তুলেছিল একটি ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক কর্মসূচি।

আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল—ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা এবং বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক এই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা পারমাণবিক হুমকি থামিয়ে দেওয়া। 

আজ রাতে আমি বিশ্বকে জানাতে চাই—এই হামলা ছিল এক অসাধারণ সামরিক সাফল্য। ইরানের প্রধান পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।  

মধ্যপ্রাচ্যের এই দাম্ভিক শক্তি— ইরান, এখন শান্তির পথ বেছে নিতে বাধ্য। যদি তারা তা না করে, তাহলে ভবিষ্যতের হামলাগুলো হবে আরো ভয়াবহ এবং সেগুলো আরো সহজে বাস্তবায়ন করা হবে। 

চল্লিশ বছর ধরে ইরান ‘আমেরিকার মৃত্যু’, ‘ইসরায়েলের মৃত্যু’ চেয়ে চিৎকার করে আসছে। তারা আমাদের নাগরিকদের হত্যা করেছে। রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা দিয়ে আমাদের সৈন্যদের হাত-পা উড়িয়ে দিয়েছে। এটি ছিল তাদের বিশেষ দক্ষতা।  

আমরা এক হাজারের বেশি আমেরিকান হারিয়েছি। তাদের ঘৃণার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বিশেষ করে, তাদের জেনারেল কাসেম সোলাইমানি বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। 

আমি বহু আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম— এই হত্যাযজ্ঞ আর চলতে দেওয়া যাবে না। এবং তা চলবে না।

আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা একটি টিম হিসেবে এমনভাবে কাজ করেছি—যেভাবে ইতিহাসে খুব কম দলই করতে পেরেছে। আমরা ইসরায়েলের জন্য একটি ভয়ানক হুমকি মুছে ফেলার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছি। 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকেও তাদের অসাধারণ কাজের জন্য অভিনন্দন জানাই।

তবে সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা সেই সাহসী মার্কিন সেনাদের প্রতি— যারা আজ রাতে দুর্ধর্ষ যুদ্ধযানে চড়ে আকাশে উড়েছে এবং ইতিহাস গড়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনী আজ যে অভিযান পরিচালনা করেছে— তা পৃথিবী বহু দশক ধরে দেখেনি। 

আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের বাহিনীকে আর এমনভাবে কাজে নামতে হবে না। আমি সেটিই আশা করি। 

আমি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ-এর চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান রাইজেন কেইনকেও অভিনন্দন জানাতে চাই— তিনি একজন অসাধারণ সেনাপতি। আর এই অভিযানে যুক্ত থাকা মেধাবী অফিসারকে আমি ধন্যবাদ জানাই। 

আমি আবারো একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— এভাবে চলতে পারে না। হয় শান্তি আসবে, না-হয় ইরানের উপর এমন এক বিপর্যয়— যা হবে আট দিন ধরে চলা ধ্বংসজজ্ঞের চাইতেও বহুগুণ বড়। 

ভুলে যাবেন না, আমাদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় এখনো বহু টার্গেট বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রাণঘাতী। যদি শিগগির শান্তি না ফিরে, আমরা গতি, দক্ষতা ও নির্ভুলতার সঙ্গে পরবর্তী টার্গেটগুলোতে হামলা চালাবো। সেগুলোর বেশিরভাগই কয়েক মিনিটেই গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

আজ রাতে আমরা যা করেছি, তা বিশ্বের কোনো সামরিক বাহিনীই করতে পারত না। এমনকি কাছাকাছিও নয়। ইতিহাসে কখনোই এমন কিছু ঘটেনি, যা আজ রাতে হয়েছে।

আগামীকাল সকাল ৮টায় পেন্টাগনে জেনারেল কেইন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন।

ঈশ্বর, আমি শুধু বলতে চাই, আমরা আপনাকে ভালোবাসি, ঈশ্বর এবং আমরা আমাদের মহান সামরিক বাহিনীকে ভালোবাসি। তাদের রক্ষা করুন। ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যের মঙ্গল করুন। ঈশ্বর ইসরায়েলের মঙ্গল করুন এবং ঈশ্বর আমেরিকার মঙ্গল করুন। ধন্যবাদ সবাইকে। ধন্যবাদ। 

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন