শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২:২৪, ১৭ জুন ২০২৫
বিবিসি বাংলাকে ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, “আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আশপাশে আর কিছুই নেই—শুধু কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি কোনোভাবে টিকে আছে।”
তেহরানের জর্ডান এলাকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আবাসস্থল। এটি শহরের তিন নম্বর জেলায় অবস্থিত, যেখানে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সোমবার ওই এলাকায় ইসরায়েল পূর্বঘোষিত হামলা চালায়।
হামলার পূর্বে বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও, বহু স্থাপনা ভেঙে পড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানি সীমিত হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা তেহরানজুড়ে।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তেহরানে কর্মরত বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে রাজধানীর বাইরে অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন।
তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যাদের সবাই এখন পর্যন্ত নিরাপদে রয়েছেন বলে জানায় ঢাকা। তবে পরিস্থিতির অবনতির কারণে তাদেরকে তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তেহরানে যারা আছেন, আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। দূতাবাসের কর্মকর্তা ও অন্যান্য বাংলাদেশিদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা চলছে।”
ইসরায়েলের একের পর এক হামলায় কেঁপে উঠছে তেহরান। টানা পঞ্চম দিনের মতো বিমান হামলা চলমান। এর ফলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের মাঝেও চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ওয়ালিদ ইসলাম জানান, “অনেকেই কান্নাকাটি করে ফোন করছেন। কেউ বলছেন, ভাই এখানকার অবস্থা খুব খারাপ, আমাদের বাঁচান।”
তেহরানের বাইরের শহর বন্দর আব্বাস-সহ বিভিন্ন স্থান থেকেও অনেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ জন রোগী কিডনি ট্রান্সপ্লান্টসহ চিকিৎসার জন্য ইরানে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তাদেরকে হাসপাতাল এলাকায় অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল এলাকাও হামলার শিকার হওয়ায় তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
দূতাবাস কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাও করছি।”
একইভাবে বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান ও তার ইরানি স্ত্রী বেড়াতে গিয়ে এখন আটকা পড়েছেন। যুদ্ধ শুরুর কারণে তাদের পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে।
বর্তমানে ইরানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যার মধ্যে চারশ'র মতো আছেন তেহরানে। ইতোমধ্যে ঢাকায় এবং তেহরানে হটলাইন চালু করা হয়েছে, যাতে প্রবাসীরা জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রায় ১০০ জন ইতোমধ্যে হটলাইনে যোগাযোগ করে সরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দূতাবাসের ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও সরানোর চেষ্টা চলছে।
তাদের তেহরানের উপকণ্ঠ ভারামিন শহরে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে, এবং কিছু শিক্ষার্থীকে সাবে নামক এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। তবে ভারামিনও তেহরানের মধ্যেই হওয়ায় ভবিষ্যতে হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির সুযোগ পেলেই বাংলাদেশিদের ইরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হবে, জানিয়েছেন ওয়ালিদ ইসলাম। তবে কবে সেই সুযোগ মিলবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ