শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪০, ১৬ জুন ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে মোট ২০টি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা হয়েছে; যার মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি— রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই তিনটি সরকারি হাসপাতালে মোট ১০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; যা পরীক্ষার মোট সংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
দীর্ঘদিন করোনা পরীক্ষার যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় অধিকাংশ হাসপাতালে সেগুলোর পুনরায় ক্যালিব্রেশন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এক সময় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানদের একটি বৃহৎ দল থাকলেও, সেই মানবসম্পদের একটি বড় অংশ এখন আর কর্মরত নেই। কারণ, করোনা মহামারির সময় পরিচালিত ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ নামক প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের অধীনে এক হাজার চার জন টেকনিশিয়ান ও মেডিক্যাল অফিসার নিয়োজিত ছিলেন; যারা দেশে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। চলতি বছরের মে মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে।
এই প্রকল্পের কর্মীরা কয়েক দিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি, বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং চাকরি স্থায়ীকরণ। আন্দোলনরত কর্মীদের মতে, তাদের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষার গতি ব্যাহত হচ্ছে এবং দেশের করোনা ব্যবস্থাপনায় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি চিঠি পাঠিয়ে করোনা পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে কিট ও অন্যান্য উপকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত না হওয়ায় তা এখন অকেজো অবস্থায় রয়েছে এবং পরীক্ষার জন্য নতুন করে ক্যালিব্রেশন প্রয়োজন। একইসঙ্গে, এই হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কোনো প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানও বর্তমানে নেই।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছয়টি সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট সরবরাহ করে। এসব হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এসব হাসপাতালের অধিকাংশ এখনো পরীক্ষা শুরু করেনি। যদিও ঢামেক, সোহরাওয়ার্দী, মুগদা ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা ১৪ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু করবেন। কিন্তু ১৫ জুন পর্যন্ত এসব হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে অধিদপ্তর। এতে স্পষ্ট হয়, সরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার পুনরায় কার্যক্রম শুরু এখনো পরিকল্পনার স্তরেই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালকরা জানিয়েছেন, তারা নিয়মিতভাবে করোনা পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য তালিকায় এই দুটি হাসপাতালের নাম নেই; যা তথ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে নির্দেশ করে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের লাইন ডিরেক্টর হালিমুর রশিদ জানিয়েছেন, আরো কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে কিট সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ঈদের ছুটির পর অফিস খোলায় কিছুটা সময় লাগছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ হাসপাতালই পরীক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে।
ঢাকার বাইরে ১১টি মেডিক্যাল কলেজকে তাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা চালু করার নির্দেশ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন।
তার ভাষ্যমতে, ইতোমধ্যে পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ তাদের যন্ত্রপাতি চালু করেছে এবং বাকিগুলো দু-একদিনের মধ্যেই চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, রাজশাহী, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ আরটি-পিসিআর চালু করেছে। আর রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা মেডিক্যালে শিগগির চালু হবে।
দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় এসব যন্ত্রপাতি ক্যালিব্রেশন করতে হচ্ছে বলে কিছুটা সময় লাগছে বলে জানান তিনি।
এমন পরিস্থিতি চলমান থাকার সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার আবারো বাড়ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বগামী। শনাক্ত বাড়ছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে।
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ঢাকায় সরকারি একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।। এর আগে দেশে ৫ জুন একজন ও ১৩ জুন দুই জনের মৃত্যু হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০৩।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১ জনের কাছ থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৬টি নমুনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩।
একই সময়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন চারজন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০-এ দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ব্যবহার এবং সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। করোনায় প্রথম মৃত্যুর কথা জানা যায় ওই বছরের ১৮ মার্চ। এর তিন বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে করোনার কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুই দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন জেএন.১-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। দ্রুত ছড়ানোর কারণে জেএন.১-কে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটিই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভেরিয়েন্টের উপধরন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ