ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

তেলের বাজারে ঝড়, আকাশপথে স্থবিরতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬:৪৫, ১৭ জুন ২০২৫

তেলের বাজারে ঝড়, আকাশপথে স্থবিরতা

পঞ্চম দিনে পৌঁছেছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনা, যা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে। এই দ্বন্দ্বের উত্তাপে কাঁপছে বিশ্ব অর্থনীতি, অস্থির হয়ে উঠেছে তেলের বাজার, হুমকির মুখে পড়েছে বৈশ্বিক বিমান পরিবহন এবং শেয়ারবাজার।

ইরানের পাল্টা হামলার জবাবে ইসরায়েল শুক্রবার তেহরানে আকস্মিক হামলা চালায়। এর পরদিন থেকেই বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। সোমবার সকালে দাম দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ৬০ ডলারে— যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সংঘাত অব্যাহত থাকে এবং ইরান হুমকি অনুযায়ী হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ বিশ্বের মোট সামুদ্রিক জ্বালানি সরবরাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয় এই পথ দিয়ে। যদিও বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এমন পদক্ষেপে ইরান নিজেও বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে চীনে ইরানের তেল রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

টিএস লম্বার্ড-এর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হামজাহ আল গাউদ বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সেটা শুধু বিশ্ববাজারের জন্য নয়, ইরানের জন্যও ভয়াবহ হতে পারে।’

তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকসহ জ্বালানিনির্ভর পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ে। এতে বাড়ছে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে জি–৭ ভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতির ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হবে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য সুদহার কমিয়ে ৪.২৫ শতাংশে নামিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো সুদ কমাতে নারাজ, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী।

যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারেও। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ১.১ শতাংশ এবং নাসডাক কমেছে ১.৩ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যে মিসরের ইজিএএক্স ৩০ সূচক পড়ে গেছে ৭.৭ শতাংশ এবং তেলআবিব সূচক কমেছে ১.৫ শতাংশ।

ইউরোপের বাজারগুলোতেও পতন দেখা গেছে—জার্মানির ডিএএক্স, ফ্রান্সের সিএসি ৪০ এবং যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ১.১ ও ০.৫ শতাংশের বেশি।

তবে প্রতিরক্ষা খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে উত্থান দেখা গেছে। ব্রিটেনের বিএই সিস্টেমস, যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন, নর্থরপ গ্রুম্যান ও আরটিএক্স-এর মতো সামরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও শেল-এর শেয়ারে উত্থান হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ।

সংঘাতের জেরে একাধিক দেশ আকাশসীমা বন্ধ করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে বিমান চলাচল। এমিরেটস এয়ারলাইন ইরান, ইরাক, জর্ডান ও লেবাননের সঙ্গে ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ইতিহাদ এবং কাতার এয়ারওয়েজ সাময়িকভাবে বেশ কিছু রুট বাতিল বা রিডাইরেক্ট করেছে।

ইরান ও ইরাক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে। জর্ডানও আকাশসীমা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

বিশ্লেষক হামজাহ আল গাউদের ভাষায়, ‘বিমান চলাচলে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়লেও যদি সংঘাত নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় থাকে, তাহলে এয়ারলাইন খাত ও পর্যটন মাসখানেকের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন