ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

তারেক রহমান বলেন

মব জাস্টিসের নামে হিংস্র উন্মাদনা মানবতার জন্য ভয়াবহ হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৬:১৫, ২৫ জুন ২০২৫

মব জাস্টিসের নামে হিংস্র উন্মাদনা মানবতার জন্য ভয়াবহ হুমকি

দেশে মব জাস্টিসের নামে হিংস্র উন্মাদনা মানবতার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে। আজ (২৬ জুন) নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, “রক্তোন্মাদনা আজ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ রক্তপাত, হানাহানি এবং পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে উঠেছে। স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীরা বিরোধী মতের মানুষদের ওপর সীমাহীন দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা—সব মিলিয়ে কোটি মানুষের জীবন আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত।”

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ১৬ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্রকে বন্দী করে আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছিল। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা—সব কিছুই ছিল শৃঙ্খলিত।

তিনি অভিযোগ করেন, “বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এমনকি তাঁর সুচিকিৎসাও বর্বরভাবে আটকে দেওয়া হয়েছিল। গোটা দেশকেই পরিণত করা হয়েছিল একটি ভয় ও নির্যাতনের ঘরে। প্রতিবাদ করলেই পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হতো। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পোষ্য সন্ত্রাসীরা নারীর সম্ভ্রম, শিশুর নিরাপত্তা, সাধারণ মানুষের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলে।”

তারেক রহমান আরও বলেন, “এখন আবার মব জাস্টিসের নামে এক হিংস্র উন্মাদনা মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হলে গণতন্ত্রকে চলমান রাখতে হবে। আইনের শাসন, মানবতা, ন্যায়বিচার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে ঐক্য এখন সময়ের দাবি।”

জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই দিনে আমরা নির্যাতনের শিকার সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানাই। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই দমন-পীড়ন চালানো স্বৈরশাসকদের পরাস্ত করা সম্ভব।”

এই উপলক্ষে দেওয়া আরেক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে বলেন, “গত বছর জুলাই-আগস্টে সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ভয়াবহ দমননীতি চালানো হয়েছিল। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে হাজার হাজার মানুষ।”

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের ফলে মানুষ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গুম, বন্দুকযুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একদলীয় শাসনের চাপে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল ভয়, হুমকি ও দমননীতির শিকার। এই সময়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে বর্বরতম নির্যাতন।”

ফখরুল বলেন, “আমরা নির্যাতিত-নিপীড়িত সব মানুষ, জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা ও সংহতি। আমাদের বিশ্বাস, মানবিকবোধ ও গণতন্ত্রকামী জনতার ঐক্যই নির্মম শাসকদের প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।”

জাতিসংঘ ঘোষিত এই আন্তর্জাতিক দিবসে বিএনপি নেতাদের এই দুটি বিবৃতিই স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা ছাড়া কোনো উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। সেই লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন