ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

১১ কারণে নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৫:২০, ২৩ জুন ২০২৫

১১ কারণে নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ পরিচালনার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। সোমবার (২৩ জুন) শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে দুপুর ২টার পর।

রিমান্ড আবেদনে কে এম নূরুল হুদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ১১টি কারণ উল্লেখ করেছে তদন্ত সংস্থা। তার মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:

১. গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি উক্ত নির্বাচন সুষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পন্ন করতে পারেন নাই এবং দেশকে গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত করেছেন।

২. প্রশাসনকে একটি পক্ষে ব্যবহার করেছে। যাতে করে সংবিধান অমান্য করেছেন এবং শপথ ঠিক রাখতে পারেন নাই।

৩. দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ (ক) ধারার সংজ্ঞা মতে নির্বাচনের ছদ্মবেশ ধারণ করে দিনের ভোট রাতে সম্পাদন করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধা করে নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। সে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অন্যান্য কমিশনার এবং বিভাগীয় ও জেলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

৪. ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশ, সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তরুণ সমাজের ভোটে বিমুখ, ভারমূর্তি নষ্ট করেছে।

৫. গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকা অবস্থায় কার পরামর্শে ও সহযোগিতায় ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিতদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে মিথ্যা বিবৃতির মাধ্যমে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে এবং মিথ্যা গেজেট প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করে।

৬. গ্রেফতারকৃত আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে তা উদঘাটন করা। যাতে করে কোটি কোটি নতুন প্রজন্মের ভোটারগণ ভোট দিতে পারেনি। তাতে দেশে স্বৈরাচারীর বীজ বপন করা হয়েছিল।

৭. নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও গ্রেফতারকৃত আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে. এম. নূরুল হুদা কার ইন্ধনে ও কী স্বার্থে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

৮. গ্রেফতারকৃত আসামি ফ্যাসিবাদের মূল নায়ক। তার কাছ থেকে পাতানো নির্বাচনের কৌশল ও জড়িতদের উদঘাটন করা দরকার।

৯. গ্রেফতারকৃত আসামি কোন কোন সংসদ আমলে কার কার কাছ হতে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করে ফলাফল পরিবর্তন করে গেজেটে সাজানো ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেছেন তার তথ্য উদঘাটন করা দরকার।

১০. এজাহারনামীয় পলাতক ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেফতার।

১১. মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা।

রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে তাকে আটক করে এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত হুদার গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে জনতা তাকে ঘিরে রেখেছে।

এর আগে, একইদিন সকালে বিএনপি শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার বাদী দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এতে সাবেক তিন সিইসি—কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, ১০ম, ১১তম ও ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো পরিকল্পিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন