ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

বিজ্ঞানীদের নতুন আবিস্কার

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হবে প্যারাসিটামল

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৬:২৯, ২৫ জুন ২০২৫

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হবে প্যারাসিটামল

প্লাস্টিক বর্জ্যকে ব্যথানাশক ওষুধে রূপান্তরের এক যুগান্তকারী পথ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্যারাসিটামল (যা অ্যাসিটামিনোফেন নামেও পরিচিত) তৈরি সম্ভব, তাও আবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও মোড়কের মতো বর্জ্য উপকরণ থেকে। গবেষকরা বলছেন, এটি ওষুধ উৎপাদনের একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হতে পারে।

এই অভিনব গবেষণাটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার অধ্যাপক স্টিফেন ওয়ালেস। তিনি বলেন, “অনেকে জানেন না, প্যারাসিটামল সাধারণত পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ থেকে তৈরি হয়। আমাদের প্রযুক্তি দেখাচ্ছে, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করেও জৈবিক উপায়ে এই ওষুধ তৈরি করা সম্ভব।”

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট—যা সাধারণ খাবারের মোড়ক ও বোতলে ব্যবহৃত হয়—তা রসায়নভিত্তিক একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রূপান্তর করে এক নতুন উপাদান তৈরি করেন। এরপর সেটিকে ইশেরেশিয়া কোলাই (E. coli) ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করলে দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়া এটি থেকে ‘প্যাবা’ নামক উপাদান তৈরি করছে। উল্লেখ্য, প্যাবা ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় একটি অণু, যা তারা সাধারণত নিজেরাই তৈরি করে ডিএনএ সংশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করে।

গবেষণার অন্যতম বিস্ময় হলো—এই পুরো প্রক্রিয়ায় একটি জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া, যার নাম ‘লসেন রি-অ্যারেঞ্জমেন্ট’, সেটি ঘটেছে জীবন্ত কোষের ভেতরে, কোনো ক্ষতি ছাড়াই। সাধারণত এই বিক্রিয়ার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা ও রাসায়নিক পদার্থের প্রক্রিয়া লাগে, কিন্তু এখানে দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার কোষের ভেতরের ফসফেট নিজেই প্রাকৃতিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

গবেষকরা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত ইশেরেশিয়া কোলাইকে জেনেটিকভাবে এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে তারা নিজেরা প্যাবা তৈরি করতে না পারে এবং প্লাস্টিক থেকে তৈরি পদার্থটি ব্যবহারে বাধ্য হয়। এরপর আরও দুটি জিন যোগ করে ব্যাকটেরিয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে তারা প্যাবা থেকে সরাসরি প্যারাসিটামল তৈরি করতে পারে।

এই জৈবিক রূপান্তরের ফল ছিল চমকপ্রদ। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মাত্র ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে এই কৌশল ব্যবহার করে প্লাস্টিক থেকে প্রায় ৯২ শতাংশ উৎপাদন দক্ষতায় প্যারাসিটামল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, এবং সেটিও কম দূষণে।

অধ্যাপক স্টিফেন ওয়ালেস বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি এমন এক জৈবিক পদ্ধতির সূচনা করেছে, যেটি কার্যত প্লাস্টিক গিলে ফেলে এবং তার পরিবর্তে দরকারি ওষুধ উপহার দেয়। এটি জীববিজ্ঞান ও রসায়নের চমৎকার এক সমন্বয়।”

যদিও এখনো এই পদ্ধতি পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ, তবে গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই উদ্ভাবন ওষুধ শিল্পে পরিবেশবান্ধব বিপ্লব ঘটাতে পারে। আর এটি যদি বড় পরিসরে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন প্লাস্টিক দূষণ কমানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে পেট্রোলিয়ামনির্ভরতা কমিয়ে ওষুধ উৎপাদন আরও টেকসই করে তোলা যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল একটি গবেষণার সাফল্য নয়, বরং ভবিষ্যতের চিকিৎসা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও শিল্পপ্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন