ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

এনসিপি নেতা ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭:৩০, ২৫ জুন ২০২৫

এনসিপি নেতা ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় অবৈধ ড্রেজার বালু ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যার দিকে রাজৈরের হোসেনপুর ইউনিয়নের তাতিকান্দা গ্রামের ২ নম্বর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান।

আহতরা হলেন এনসিপির মাদারীপুর জেলা সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য মহাসিন ফকির (৩৫) ও তাঁর দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জান্নাতুল জারা নিপা (৩০)। বর্তমানে তাঁরা রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যুবদল নেতা এনামুল শেখ ও তার অনুসারীরা ড্রেজার পাইপ স্থাপন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলেন। এনসিপি নেতা মহাসিন ফকির ওই কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে বেধড়ক মারধর করা হয়। স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে নিপাকেও মারধরের শিকার হতে হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, নিপার গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং পেটে-পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মহাসিন অভিযোগ করেন, বিএনপির স্থানীয় নেতা লতিফ বয়াতির ফোনে ঘর থেকে ডেকে এনে এনামুল শেখ, হক ও আরও কয়েকজন তাঁকে মারধর করে। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও মাকেও গালাগাল করা হয় এবং এনসিপির নাম উল্লেখ করে হুমকি দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, এনসিপির সদ্য গঠিত জেলা কমিটিকে ঘিরেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা নতুন কমিটি মানি না। মাদারীপুর জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসিবুল্লাহর প্যানেলের নেতা মিরাজুল ইসলাম হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন। পূর্বে আমাকে গুমের চেষ্টাও করা হয়েছিল।”

আহত জান্নাতুল জারা নিপা জানান, “আমার স্বামীকে ফোন করে ডেকে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি চিৎকার শুনে বের হলে ওরাও আমাকে মেরে গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়। আমি অন্তঃসত্ত্বা, অথচ ওরা আমার পেটে পর্যন্ত লাথি মেরেছে।”

অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত এনসিপি নেতা মিরাজুল ইসলামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে অভিযুক্ত যুবদল নেতা এনামুল শেখ পাল্টা অভিযোগে বলেন, “আমি একটি পুকুর ভরাট করছি। মিরাজুলের ড্রেজার ব্যবহার করছি। মহাসিন চাঁদা দাবি করছিল, না পেয়ে পাইপ ভেঙে দেয়। তখন আমার ভাই নাজমুল তাকে মারধর করেছে। আমরা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

যুবদলের ইউনিয়ন কমিটি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এনামুল বলেন, ‘কমিটি হয়নি, তবে আমি একমাত্র প্রার্থী।’ এ বিষয়ে রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তবে এখনো মামলা হয়নি। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ ঘটনায় জেলা ও উপজেলা এনসিপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন