ঢাকা, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

৫ আষাঢ় ১৪৩২, ২২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যর নেতৃত্বে রাজধানীতে ছিনতাই

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ২০:৫০, ১৯ জুন ২০২৫

চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যর নেতৃত্বে রাজধানীতে ছিনতাই

রাজধানীর উত্তরায় র‍্যাব পরিচয়ে নগদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এক কোটি আট লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সেনা সার্জেন্ট ও সাবেক পুলিশ কনস্টেবল। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা, একটি হায়েস মাইক্রোবাস, ব্যাংকে জমা ১২ লাখ টাকা, র‌্যাব-পুলিশের ভুয়া আইডি কার্ড ও সরঞ্জাম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজনের নামে রয়েছে একাধিক মামলা।

কী ঘটেছিল সেই দিন?

ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৪ জুন (শনিবার) সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে নগদ ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন উত্তরার বাসা থেকে নগদের অফিসে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার চারজন কর্মচারী এবং চারটি ব্যাগে থাকা এক কোটি আট লাখ টাকা। তারা দুটি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন।

উত্তরা ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে হঠাৎ একটি কালো হায়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র‌্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত, মুখোশ পরা ৬-৭ জন অস্ত্রধারী নামেন। তারা নিজেদের র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে নগদের কর্মচারীদের ধাওয়া করে চারটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

তিন কর্মচারীকে তারা অপহরণ করে মারধর করে এবং পরে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। একজন কর্মচারী পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে খবর দেন। ওইদিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

ধরা পড়ে গেল চক্র

ঘটনার পর তদন্তে নামে ডিবি ও উত্তরা বিভাগ। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণে প্রথমে শনাক্ত হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালক মো. হাসান। বুধবার (১৮ জুন) রাত পৌনে ২টার দিকে তাকে খিলগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি নকল নেমপ্লেট ও নগদ টাকা।

হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সবুজবাগ থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে ধরা পড়ে ডাকাত চক্রের মূলহোতা পুলিশ থেকে চাকরিচ্যুত গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন, সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল, ইমদাদুল শরীফ এবং সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন।

সেনা-পুলিশ পরিচয়ে চক্রের অপতৎপরতা

ডিসি মুহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার শাহিন ১৯৯৫ সালে রমনায় অস্ত্রসহ ধরা পড়ে পুলিশ চাকরি হারায়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, প্রতারণাসহ অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে।

অপরদিকে শেখ জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট। নিজেকে ‘ক্যাপ্টেন জালাল’ পরিচয় দিয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে ছদ্মবেশে অপরাধ করে আসছিল। তিনি ডাকাতির ১২ লাখ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দেন, যা পুলিশ জব্দ করেছে।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ‘র‌্যাব’ ও ‘পুলিশ’ পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভুয়া আইডি কার্ড, র‌্যাবের জ্যাকেট, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগোযুক্ত মানিব্যাগ, মোবাইল ও চেক বই।

কর্মচারীদের ভূমিকায় সন্দেহ?

এ ঘটনায় নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের কিছু কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো যোগসাজশের প্রমাণ মেলেনি বলে জানায় ডিএমপি।

এখনো পলাতক আরও কয়েকজন

ডিএমপির ডিসি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও তিনজন পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার এবং ছিনতাই হওয়া অবশিষ্ট টাকাগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন