শিরোনাম
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:৪৩, ৪ মে ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা এক নারীর প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা ও শাড়ি খুলে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কারা ঝোলাল এই প্রতিকৃতি? এ ঘটনায় সমালোচনাও হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আরো একটি কারণ, বর্তমানে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ইসলামভিত্তিক দলগুলো সরব। এমনকি নারী সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়েছে।
শনিবার (৩ মে) এ ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ওই প্রতিকৃতিটি দেখা যায়। ওই প্রতিকৃতির পরনে ছিল জারুল ফুলের রংয়ের নকশা করা শাড়ি ও ব্লাউজ। মুখ ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তি একের পর এক এসে জুতাপেটা করছেন প্রতিকৃতিতে। এরপর একসময় জুতাপেটার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিকৃতিটি দোল খেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তার পরনে থাকা শাড়িটি খসে পড়ে। এসময় দুই তরুণ এসে আবারো শাড়িটি পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারী কেউ কেউ বলছেন, এটি যদি শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবেও ঝুলিয়ে রাখা হয়, তারপরেও এটি নারীর প্রতি অবমাননার প্রতীক হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে নারীর অবমাননার সঙ্গে বা সংস্কার কমিশনের বিরোধিতার করে এই প্রতিকৃতি ঝুলানো হয়নি বলে দাবি তোলা হলেও- যিনি এই প্রতিকৃতির ছবিটি তুলেছিলেন, তিনি একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি আমি তুলেছিলাম ১ মে ২০২৫। ‘জাগ্রত জুলাই’ নামে একটি সংগঠন শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিকে ফাঁসি দিয়ে একটি কর্মসূচি পালন করে। আজকে ৩ মে ২০২৫, ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ছবিটি আজকের দিবস উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকজন টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজন এই ছবিটিকে জুতাপেটা করছে, এমন নিউজ ও সংবাদ পরিবেশন করতে দেখলাম। বাস্তবতা হচ্ছে— এই ছবিতে প্রতীকী আক্রমণ করার ঘটনা নারীর প্রতি হেনস্তা বা সহিংসতা নয়। এটি মূলত শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। শেখ হাসিনার ফাঁসির ছবিকে যারা নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তারা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর। এদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করুন।’
এটিকে নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে কেন দেখতে হবে প্রশ্নে, ‘উই ক্যান’র সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসক বলতে এখন নারীর ইমেজ ভাবছি। একটা নারী সেটি যেই হোক, এভাবে হেনস্তা করা ও হেনস্তা হতে দেখার মধ্যে এক ধরনের চাল আছে। এটি দেখায় যে, নারীকে এভাবে বীভৎস করে পেটানো যায়।’ তিনি মনে করেন, যেকোনো স্ট্রাকচারকেও স্বৈরাচারের সিম্বলিক করা যায়, এরজন্য শাড়ি পরানোর দরকার হয় না। শাড়ি পরিয়ে নারীর ইমেজকে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে নারীবিদ্বেষী আত্মা শান্তি পাচ্ছে। ওরা মনের ক্ষোভটা পূরণ করেছে। এখানে আমি হাসিনা বা স্বৈরতন্ত্র দেখছি না, এখানে মৌলবাদ ও পিতৃতন্ত্র এক হয়ে গেছে। এই সরকার যদি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে, তবে বুঝবো— তারা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য আব্দুল্লাহ জানান, কয়েক ব্যক্তি শনিবার (১ মে) এই ঝুলন্ত প্রতিকৃতিটি এখানে রেখে যায়। পরবর্তী সময়ে সেটি শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি বলেই সবাই জানে। আজ হেফাজতের কর্মীরাও এটিকে শেখ হাসিনা ভেবেই জুতা মেরেছে।
ভিডিওটি ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে শেয়ার করে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এক নারীর প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে জুতোপেটা করার জন্য। নারীকে কী করে ঘৃণা করতে হবে, কী করে তাদের হেনস্তা করতে হবে, নির্যাতন করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে। যেন ওপেন ওয়ার্কশপ চলছে।
তিনি লিখেছেন, সন্ধ্যের পর পুরুষেরা শাড়ি-ব্লাউজ খুলে প্রতিকৃতিকে রেপও করে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এরা বাংলার নারীকে এভাবেই ট্রিট করে, এভাবেই ট্রিট করতে চায়। সরকারের কাছে নারীর প্রাপ্য অধিকার দাবি করা হচ্ছে এই খবর শুনে সারা দেশের ইসলামি গুণ্ডারা উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তাদের কুৎসিত নারীবিদ্বেষ ছিটকে পড়ছে চারদিকে।
তিনি আরো লিখেছেন, আসলে যে নারীর প্রতিকৃতি বানিয়েছে জুতোপেটা করার জন্য, সে কোনও ইন্ডিভিজুয়ালের প্রতিকৃতি নয়, সে মা, বাংলা মায়ের প্রতীক। তারা এই বাংলা মাকে, দেশ মাতৃকাকে, এভাবেই ছিন্নভিন্ন করছে, রক্তাক্ত করছে, উলঙ্গ করছে, ধর্ষণ করছে।
তবে সাংবাদিক এহসান মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, জাগ্রত জুলাই নামের এক সংগঠন শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে ফাঁসি দিয়ে একটি কর্মসূচি পালন করেছে। ৩ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ছবিটি আজকের দিবস উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকজন টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজন এই ছবিটিকে জুতাপেটা করছে, এমন নিউজ ও সংবাদ পরিবেশন করতে দেখলাম।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে এই ছবিতে প্রতীকী আক্রমণ করার ঘটনা নারীর প্রতি হেনস্থা বা সহিংসতা নয়। এটা মূলত শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফাঁসির ছবিকে যারা নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তারা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর। এদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করুন।
ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা ‘জাগ্রত জুলাই’ নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে জানতে পেরেছি, তারা এটি লাগিয়েছে। আমরা তাদের কাউকে ফোনে পাচ্ছি না। তাদেরকে এটি সরিয়ে নিতে হবে। নয়তো আমরাই সরিয়ে ফেলবো।
জুতাপেটা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি খবর পেয়েছি, সেখানে কেউ কেউ জুতা নিক্ষেপ করেছে। বাইরে এটা খুব বাজে বার্তা দিচ্ছে। আমরা জাগ্রত জুলাইয়ের কাউকে না পেলে এটি সরিয়ে ফেলবো।