শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৫১, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২২, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
উদাহরণস্বরূপ, জনতা ব্যাংকের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৬ বার নিলামের আয়োজন করে। ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও এ সময়ের মধ্যে কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি, যার ফলে আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংক।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশও এস আলম গ্রুপের এক লাখ কোটি টাকার বেশি বকেয়া ঋণের বিপরীতে নিলামের আয়োজন করেও ক্রেতা পায়নি। ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখা গত মার্চ থেকে গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সাত দফা নিলাম ডেকেছে। এরমধ্যে দুটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হলেও কোনো দরপত্র জমা পড়েনি।
সাম্প্রতিক এক উদ্যোগে, ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখা গত ২৮ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলসের মালিকানাধীন সীতাকুণ্ডের বানশবাড়িয়ার একটি জমি নিলামে তুলেছে। ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে এই নিলাম ডাকা হয়। আগ্রহী ক্রেতাদের আগামী ৮ মের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইসলামী ব্যাংক থেকে আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলস ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যা সুদসহ বেড়ে বর্তমানে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, গত ২৭ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের একটি স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভোজ্যতেল কারখানা ও ৩৮ বিঘা জমিসহ বিভিন্ন সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। এসবের বিপরীতে গ্রুপটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান-এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন এবং এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বন্ধকী সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২২ এপ্রিল এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পত্তিরও নিলাম আহ্বান করেছিল ব্যাংকটি। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (মাসুদ) এবং তার ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান হলেন চেয়ারম্যান।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই নিলাম ডাকা হচ্ছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত দুটি নিলামে কোনো দরপত্র জমা পড়েনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৮৩ শতাংশ শেয়ার দখল করে রেখেছিল। সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় এসব শেয়ার জব্দ করা হয় এবং ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরমধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠানটির ওপর থেকে শেষ হয় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ।
অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশ পাচার করা হয়েছে বিদেশে। এরমধ্যে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা এবং পরোক্ষভাবে নেওয়া ঋণ ২০ হাজার ৩৮ কোটি টাকা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ