শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৪৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৮:৫৩, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
দারুল উলুম হাক্কানিয়া, এক কথায় যাকে সবাই চেনে ‘জেহাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে। এখান থেকে পড়ুয়াদের অনেকেই সরাসরি অংশ নিয়েছেন রাশিয়া-আফগান যুদ্ধে। অভিযোগ আছে যে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ডের সাথে মাদ্রাসাটির সাবেক কিছু ছাত্র জড়িত। মাদ্রাসাটিতে সরাসরি সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলেও এখানকার ছাত্ররা চাইলে ছুটির সময়ে জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য যেতে পারে বলে জানা গেছে৷
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অন্যতম ‘কৃতী’ ছাত্র মোল্লা ওমর। হ্যাঁ, সেই ওমর, আমেরিকা যার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১ কোটি ডলার। রুশদের সঙ্গে লড়াই করার সময়ে নষ্ট হয়েছিল একটা চোখ। উড়ে গিয়েছিল এক হাতের কবজি। তাই নিয়েই লাদেন-ঘনিষ্ঠ ওমর তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের প্রধানতম কারিগর হয়ে ওঠে। এহেন ওমরের ‘গুরু’ ছিলেন মাদ্রাসার সাবেক চ্যান্সেলর সামি উল হক। অধুনাপ্রয়াত সামি আবার ‘তালিবানের পিতা’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন পাকিস্তানে। ২০১৮ সালে আততায়ীর হাতে ছুরিকাঘাত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে পাকিস্তান সরকার প্রধানসহ সাবেক-বর্তমান অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আলেম শোক প্রকাশ করেন।মাওলানা সামি উল হককে তালেবান আন্দোলনের প্রধান নেপথ্য পুরুষ হিসেবেও গণ্য করা হয়। কারণ এ আন্দোলনের প্রথম সারির নেতাদের শিক্ষক ছিলেন তিনি। মাওলানা সামি উল হক পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা ও পাকিস্তান সিনেটের সাবেক সদস্যও ছিলেন। শেষ বয়সে পাকিস্তানে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
এই মাদ্রাসা ফেরত আরও কয়েকটি ‘উজ্জ্বল’ নাম হল হাক্কানি নেটওয়ার্কের মূল হোতা জালালউদ্দিন হাক্কানি, কিংবা ২০০৭ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দুই হত্যাকারী।
বছরের পর বছর এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভিড়েছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীতে। পাশাপাশি রাশিয়া কিংবা আমেরিকার সঙ্গে আফগানদের সংঘর্ষের সময়ও তাদের দেখা গিয়েছে যুদ্ধে যোগ দিতে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের এই ‘জেহাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ পেশোয়ার থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকেও দূরত্ব বেশি নয়। ৯০ কিমি। এখানে পড়াশোনা করে প্রায় হাজার চারেক ছাত্র। মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের খরচ দেওয়া হয়৷ ঠিক কী হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই মাদ্রাসায়? একটা কথা পরিষ্কার করে দেওয়া ভাল। এখানে কিন্তু কোনও জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির নেই।
আয়ারল্যান্ডের কুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের আফগান-পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ মাইকেল সেম্পলের কথায়, ‘ফ্যাকাল্টি, শিক্ষার্থী ও সাবেকদের সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো যোগসূত্র রয়েছে আফগান তালিবানদের সঙ্গে। তারা নিয়মিত এখানকার তরুণ স্নাতকদের নিয়োগ করে তাদের গোষ্ঠীতে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এসব মোটেও গোপনে হয় না। যেভাবে রিক্রুটমেন্ট ফেয়ারে প্রযুক্তি সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের নির্বাচন করে, ব্যাপারটা সেভাবেই ঘটে।’’
২০১৪ সালের পেশোয়ারে স্কুলের মধ্যে নারকীয় সেই হত্যালীলা মনে পড়ে? দেড়শোরও বেশি মারা গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩৪ জনই তাজা ফুলের মতো ছোট্ট শিশু! তারপর জঙ্গি ক্রিয়াকলাপ দমনে জাতীয় কর্মসূচি নিয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ছ’বছর কেটে গিয়েছে। কিছুই হয়নি। নিয়মিত সরকারি অনুদান পেয়েছে হাক্কানিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলি।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ