ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আল আকসা কি পরবর্তী টার্গেট?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:১১, ২১ জুন ২০২৫

আল আকসা কি পরবর্তী টার্গেট?

ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের মধ্যে নতুন করে সামনে এসেছে বহু পুরোনো একটি প্রশ্ন: আল আকসা মসজিদ কি পরবর্তী সংঘর্ষের কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে?

গত সপ্তাহে ইরান যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালায়, তখন দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আকাশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্র আল আকসা মসজিদের আশেপাশে ফিলিস্তিনিরা উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, যদিও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের দিকে সরাসরি লক্ষ্য ছিল না। তবুও, এই আতঙ্ক উস্কে দিয়েছে এক গম্ভীর শঙ্কা— ইসরায়েল কি পরিকল্পিতভাবে আল আকসায় হামলা চালিয়ে এর দায় ইরানের ঘাড়ে চাপাতে পারে?

তুর্কি বিশ্লেষক জাহিদে তুবা কোর মনে করেন, এটি ইসরায়েলের জন্য ‘সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়’। তাঁর মতে, মোসাদ চাইলে এমন হামলা চালাতে পারে যা ইরানের ঘাড়ে চাপানো সম্ভব। কোর আরও বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি নেতাদের ভাষণে ধর্মীয় এবং বাইবেলভিত্তিক উপাখ্যান ক্রমেই বেশি জায়গা নিচ্ছে। এর মানে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান কেবল কৌশলগত নয়, ধর্মীয় লক্ষ্যেও পরিচালিত।

ইসরায়েলের টেম্পল মাউন্ট আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরেই পবিত্র আল আকসা ও ডোম অব দ্য রক ভেঙে ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণে আগ্রহী। ২০১৮ সালে হারেৎজ পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ পরামর্শক ও একাধিক মন্ত্রী এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।

২০২২ সালে ‘টেম্পল ইনস্টিটিউট’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘লাল গরু’ আমদানি করে, যা নতুন ইহুদি উপাসনালয়ের শুদ্ধিকরণ আচার সম্পাদনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ধর্মীয় মতে, এই গরুর ছাই দিয়েই নতুন মন্দিরে পূজা সম্ভব।

বিশ্লেষক কোর সতর্ক করেন, ‘ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে— কেবল এখন আল আকসা ধ্বংস আর লাল গরু উৎসর্গের অপেক্ষা।’ তাঁর মতে, এমন একটি হামলা হলে তা ইসরায়েলের জন্য হবে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’— একদিকে ইরানকে দায়ী করে মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ ঘুরিয়ে দেওয়া, অন্যদিকে নিজেদের ধর্মীয় প্রকল্পে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

ইতিহাসবিদ জাকারিয়া কুরসুন বলেন, এই ধরনের একটি হামলা সুন্নি-শিয়া বিভাজনকে আরও গভীর করতে পারে এবং মুসলিম বিশ্বকে মানসিকভাবে আল আকসা হারানোর জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

১৯৬৯ সালে এক অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান আল আকসা মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, ধ্বংস হয় সালাহউদ্দিনের বিখ্যাত মিনার। ইসরায়েলি আদালত তাকে ‘মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন’ ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেয়— যেটি নিয়ে আজও সন্দেহ থেকে গেছে।

১৯৯৪ সালে হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বারুচ গোল্ডস্টাইন গুলি চালিয়ে ২৯ জন মুসল্লিকে হত্যা করেন। পরে ইসরায়েল ওই মসজিদটি ভাগ করে দেয়— ৬৩ শতাংশই বরাদ্দ হয় ইহুদি উপাসনার জন্য।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও আল আকসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কখনওই প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি— এটাই তাদের দীর্ঘদিনের অস্বস্তির কেন্দ্র। আজকের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, বৈশ্বিক বিভ্রান্তি এবং মুসলিম বিশ্বের বিভক্তি— এই সমন্বয় ইসরায়েলের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: TRT World, Haaretz, ইতিহাসবিদ জাকারিয়া কুরসুন ও বিশ্লেষক জাহিদে তুবা কোরের বক্তব্যের ভিত্তিতে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন