ঢাকা, রোববার, ২২ জুন ২০২৫

৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ছেলের দেখানো পথে ইসলাম গ্রহণ করল দত্ত পরিবার

মৃদুল সিকদার তুহিন

প্রকাশ: ২১:৫৪, ২১ জুন ২০২৫

ছেলের দেখানো পথে ইসলাম গ্রহণ করল দত্ত পরিবার

‘আমার মনে হচ্ছে, আজ সত্যিকারের শান্তি খুঁজে পেয়েছি। যেন নতুন এক আলোয় আলোকিত হলাম আমরা সবাই’—এই ভাষায় অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী আব্দুর রহমান, যার আগের নাম ছিল অনিল দত্ত।

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার গাজীপুর গ্রামের এই পরিবারটি হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ আত্মঅনুসন্ধান আর মানসিক দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে তারা ফিরে এসেছেন সেই পথে, যা তাদের মতে শান্তির, ভালোবাসার ও আত্মতৃপ্তির পথ।

পরিবারের পিতা আব্দুর রহমান (সাবেক অনিল দত্ত), তার স্ত্রী ফাতিমা (সাবেক অনিমা দত্ত), বড় ছেলে নুর নবী (সাবেক উত্তম কুমার) স্ব-ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এর আগেই ২০২২ সালে পরিবারের ছোট ছেলে গৌতম দত্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নুর মোহাম্মদ নামে পরিচিত হন। ছোট ছেলের অনুপ্রেরণাতেই অবশেষে গোটা পরিবার আল্লাহর পথে ফিরে আসেন।

তাদের ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় গত ১৮ জুন সকালে। স্থানীয় এক হুজুরের কাছে কালিমা পাঠ করে এবং বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তারা। তাদের এই আত্মনিবেদনের প্রমাণ মিলেছে হলফনামা ও জন্মসনদের মাধ্যমে।

ছোট ছেলে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি আকর্ষণ ছিল। নিয়মিত ওয়াজ শুনতাম, ইসলামী গান শুনতাম। মুসলমান বন্ধুদের সঙ্গেই বড় হয়েছি। ইসলাম আমার মনে প্রশান্তি এনে দেয়। আমি মুসলমান হওয়ার পর বাবা-মা ও বড় ভাইয়েরাও ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ধর্ম গ্রহণ করেছেন—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।’

পারিবারিকভাবে ধর্মান্তর চমকপ্রদ হলেও, বিষয়টি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও স্বেচ্ছাধীন ছিল বলে জানিয়েছেন পিরোজপুর আদালতের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নও-মুসলিম আব্দুর রহমান তার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে নিয়ে আমাদের আদালতে উপস্থিত হন। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান এবং আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।’

এই ঘটনাটি সামাজিকভাবে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিলেও, একটিই বার্তা সবচেয়ে জোরালোভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে— ধর্মান্তর তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা হয় হৃদয় থেকে, বিশ্বাসের টানে।

ভান্ডারিয়ার এই পরিবারটি এখন নতুন নাম ও নতুন পরিচয়ে শুরু করছেন জীবনের আরেক অধ্যায়—আল্লাহর পথে, শান্তির আশ্রয়ে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন