শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২৯, ২১ জুন ২০২৫
কাতারের ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সেলুম মনে করেন, যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েল প্রথমে এগিয়ে থাকতে পারে, তবে সময় গড়ালে পাল্লা ভারী হতে পারে ইরানের দিকে। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব থাকলেও, ইরানের আছে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালানোর অভিজ্ঞতা ও সহনশীলতা।"
সেলুম ব্যাখ্যা করেন, ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় প্রাথমিকভাবে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও ইরানের ভৌগোলিক বিস্তার ইসরায়েলের চেয়ে প্রায় ৭০ গুণ বড়। এতে করে ইরানকে সামরিকভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা ইসরায়েলের জন্য প্রায় অসম্ভব।
অধ্যাপক সেলুম সতর্ক করে বলেন, ‘ইসরায়েল এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার মতো অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা রাখে না। তাদের প্রয়োজন দ্রুত কৌশলগত সাফল্য বা একটি নিষ্পত্তিমূলক বিজয়।’
ইসরায়েলের অর্থনীতি ইতোমধ্যে গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিরক্ষা ব্যয়ের উর্ধ্বগতি, শ্রমশক্তির ঘাটতি ও পর্যটন খাতের ধস—সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে অভ্যন্তরীণ জনমত এবং অর্থনীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান ১৯৮০-এর দশকের ইরাক যুদ্ধের পর থেকেই জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত। দেশটি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকেও একটি বিকল্পধর্মী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছে—বিশেষ করে তেল রপ্তানি এবং আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারে।
সেলুম বলেন, ‘ইরান যুদ্ধ সামলাতে অভ্যস্ত এবং তাদের নিজস্ব কৌশল আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো—একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করা।’ তিনি উল্লেখ করেন, এই কৌশলই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস পরিচালিত হামলায়ও দেখা গিয়েছিল, যা ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করেছিল।
ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি অনেক হামলা প্রতিহত করলেও, সেলুমের মতে, “সবগুলো হামলা প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।” কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে এবং বাস্তব ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে।
অধ্যাপক সেলুমের ভাষায়, “আমরা এমন দুটি রাষ্ট্রকে দেখছি, যারা একে অপরের থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন—তাদের যুদ্ধের ধরন, অর্থনীতি, জনমত এবং কৌশল সবই আলাদা। এবং এই ভিন্নতা থেকেই যুদ্ধের পরিণতি অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এখনো উভয় পক্ষই পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। তবে অস্ত্র সংস্থান ও হামলার মাত্রা দেখে অনেকেই বলছেন, এটি এক প্রকার ‘ঘোষণাবিহীন যুদ্ধ’ যা যে কোনো সময় পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এমন সংঘাত শুধু ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে গোটা অঞ্চলে।
সূত্র: আল-জাজিরা, কাতার ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ