ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

২৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ সফর ১৪৪৭

কক্সবাজার সফর ছিল ‘নীরব প্রতিবাদ’: হাসনাত আবদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯:৫২, ৭ আগস্ট ২০২৫

কক্সবাজার সফর ছিল ‘নীরব প্রতিবাদ’: হাসনাত আবদুল্লাহ

এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ । ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনে অংশ না নিয়ে কক্সবাজার সফরে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ঐ অনুষ্ঠানে শহীদ ও আহতদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া এবং বিভাজনের উপস্থিতি তাঁকে সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। তাই ৫ আগস্ট ঢাকার বাইরে যাওয়াটাই ছিল তাঁর ‘নীরব প্রতিবাদ’ এবং একইসঙ্গে ‘চিন্তা করার সময় বের করার প্রয়াস’।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে এনসিপির কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রকাশ করেন হাসনাত। এর আগে ৫ আগস্ট এনসিপির পাঁচ নেতাকে কক্সবাজার সফরের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় নোটিশে।

নোটিশের জবাবে হাসনাত বলেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারেন, আন্দোলনের সময় আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেক ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি এটিকে রাজনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখেন। এ কারণেই তিনি অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ভাষায়, “ঐক্যের পরিবর্তে যেখানে বিভাজন, শহীদ ও আহতদের পরিবর্তে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—সেখানে আমার উপস্থিতির কোনো যৌক্তিকতা ছিল না।”

হাসনাত জানান, ৫ আগস্ট ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া হয়নি। সেই রাতে তিনি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। না পেয়ে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে জানান তিনি তাঁর স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন। নাসীরুদ্দীন তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি আহ্বায়ককে জানিয়ে সম্মতি পেয়েছেন। পরে এই সফরে যুক্ত হন নাসীরুদ্দীন, সারজিস আলম ও তাঁর স্ত্রী, এবং খালেদ সাইফুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী তাসনিম জারা।

নোটিশ এবং তা গণমাধ্যমে ফাঁস করার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হাসনাত। তাঁর অভিযোগ, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সফরের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও তোলা হয়েছে, যা পরে কিছু গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকাণ্ডকে সন্দেহজনক ও অপরাধপ্রবণ হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি গুজব রটানো হয়েছে যে আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি, অথচ তিনি তখন দেশে ছিলেনই না।”

সবচেয়ে ‘দুঃখজনক ও নিন্দনীয়’ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সফরে অংশগ্রহণকারী এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্লাট শেমিং’ (নারীকে হেয় করে কুৎসা রটানো)। তাঁর মতে, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা। তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে এমন নিন্দনীয় আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

হাসনাত মনে করেন, এনসিপির উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘অসৎ’ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া। অথচ দলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত শোকজে এমন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে’। তাঁর বক্তব্য, “শোকজ তখনই যুক্তিসংগত হয়, যখন গঠনতন্ত্র বা কোনো নির্দিষ্ট বিধি লঙ্ঘন হয়। অথচ আমার ক্ষেত্রে এমন কিছুই ঘটেনি, যা দলীয় আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ‘বিধিবহির্ভূত’ শোকজ এবং তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, দলের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রশ্ন তোলে। শেষ পর্যন্ত তিনি উল্লেখ করেন, “আমি এনসিপির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিশ্বাস করি—পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মতের ভিন্নতাকে স্বীকৃতি এবং গণতান্ত্রিক সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমেই দল আরও পরিপক্ব হবে।”

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন