ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

মহাকাশে নিষিদ্ধ যে ১০ খাবার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:১৫, ১০ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২০:৩২, ১০ এপ্রিল ২০২৫

মহাকাশে নিষিদ্ধ যে ১০ খাবার

মহাকাশভ্রমণ যতটা রোমাঞ্চকর, বাস্তবে ততটাই কঠিন ও সীমাবদ্ধতায় ভরা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নভোচারীদের খাবারের ব্যাপারে বেশ কিছু কড়াকড়ি নিয়ম মানতে হয়। শুধু স্বাদের কথা ভেবে নয়, বরং এইসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাদের স্বাস্থ্য ও মহাকাশযানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। মহাকাশের প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বা মাইক্রোগ্রাভিটিতে কিছু খাবার বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই মহাকাশে এসব খাবারকে একরকম নিষিদ্ধই করে রেখেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। 

চলুন জেনে নিই সেই ১০টি খাবারের কথা, যেগুলো মহাকাশে নেওয়া নিষেধ:  

১. রুটি 

পৃথিবীতে প্রতিদিনকার সাধারণ খাবার হলেও রুটি মহাকাশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর ছোটো ছোটো গুঁড়ো টুকরোগুলো মাইক্রোগ্রাভিটিতে ভেসে যন্ত্রপাতিতে আটকে গিয়ে বিপদ তৈরি করতে পারে। এমনকি ঢুকে যেতে পারে নভোচারীদের শ্বাসনালীতেও। এই ঝুঁকি এড়াতে নাসা রুটির বিকল্প হিসেবে টরটিলা (রুটির মতো একধরনের খাবার) ব্যবহার করে, যা গুঁড়ো হয় না এবং অনেক বেশি নিরাপদ।  

২. লবণ ও গোলমরিচ

পৃথিবীতে অনেকেই খাবার তৈরি হওয়ার পর আলাদাভাবে লবণ বা গোলমরিচ ছিটিয়ে খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটির কারণে এই কণাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়াতে থাকে এবং মহাকাশযানের ভেন্টিলেশন সিস্টেমে ঢুকে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতে নাসা লবণ ও গোলমরিচ তরল আকারে সরবরাহ করে, যাতে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং তা নিরাপদও থাকে।

৩. কার্বনেটেড পানীয়

মহাকাশে কার্বনেটেড পানীয় পান করা একদমই অনুপযুক্ত। পৃথিবীতে গ্যাস পানীয় থেকে আলাদা হয়ে ওপরে উঠে আসলেও মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে গ্যাস ও তরল মিশে থাকে। এতে গ্যাস আলাদা হতে পারে না, ফলে নভোচারীদের পেটে অস্বস্তি, গ্যাস জমে থাকা বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসব ঝুঁকি এড়াতেই কার্বনেটেড পানীয় মহাকাশে নেওয়া হয় না।

৪. কাঁচা দুধ

মহাকাশে কাঁচা দুধ নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণের পরিবেশে এটি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নভোচারীদের জন্য সাধারণত পাউডার দুধ বা উচ্চমাত্রায় পাস্তুরিত দুধ পাঠানো হয়। এসব দুধ অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায় এবং সহজেই পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া সম্ভব, যা মহাকাশের পরিবেশে অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ।

৫. মদ

এক সময় সোভিয়েত মহাকাশ মিশনে মদের ব্যবহার থাকলেও, নাসা এটিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। মদ খেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা মহাকাশে জীবন-মরণের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি এটি মহাকাশযানের পানি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাতেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৬. কাঁচা শাকসবজি

পালংশাক বা লেটুসের মতো কাঁচা শাকসবজি সহজেই পচে যায় এবং তাদের ছোট অংশগুলো ভেসে গিয়ে মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি বা ভেন্টিলেশন সিস্টেমে আটকে যেতে পারে। তাই এসব শাকসবজি মহাকাশে পাঠানো হয় না।

৭. আইসক্রিম  

মহাকাশে আইসক্রিম জমাটবদ্ধ রাখতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। গলে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে সবসময়। যদিও মাঝে মাঝে ছোট পরিসরে হিমায়িত খাবার পাঠানো হয়, তবে আইসক্রিম নিয়মিত পাঠানো হয় না।

৮. মাছ ও গন্ধযুক্ত খাবার

মাছ ও অন্যান্য গন্ধযুক্ত খাবারও মহাকাশে নিষিদ্ধ। মহাকাশযানের ভেতর শক্ত গন্ধ দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং এটি অন্য খাবারের স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া, গন্ধ সহজে বাইরে বের হয় না, ফলে তা দীর্ঘসময় ধরে থেকে যায়। 

৯. তাজা ফলমূল

তাজা ফল খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় এবং মহাকাশের ভেতরে পচতে শুরু করে। এছাড়াও, কিছু কিছু ফল গ্যাসের সৃষ্টি করে, যা অন্য খাবারকেও তাড়াতাড়ি নষ্ট করে ফেলে। তাই মহাকাশচারীরা সাধারণত শুকনো ফল খেয়ে থাকেন।

১০. নরম পনির

নরম পনির আরেকটি নিষিদ্ধ খাবার। কারণ, এগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে না রাখলে এগুলোর বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং মহাকাশযানের সংকীর্ণ পরিবেশে এর দুর্গন্ধ আটকে থাকে।

মহাকাশে খাবার নির্বাচন শুধু রুচির ব্যাপার নয়, বরং নভোচারীদের সুস্থতা ও মহাকাশযানের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে এর ওপর। মহাকাশে ছোটো একটি ভুল ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। তাই নাসা প্রতিটি খাবার বেছে নেয় সুপরিকল্পিতভাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে খাদ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে এসব নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা বদলাতে পারে। তবে আপাতত এই নিয়মগুলোই নভোচারীদের জীবনরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে। 

আরও পড়ুন