ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৭

৪৬৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন

শামীম ওসমান ও তার স্ত্রীর নামে মামলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১:৫১, ১৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫৩, ১৫ জুলাই ২০২৫

শামীম ওসমান ও তার স্ত্রীর নামে মামলা

ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার স্ত্রী সালমা ওসমানের বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়ের বাইরে’ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক দুটি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও মেয়ে লাবীবা জোহা অঙ্গনাকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে শামীম ওসমান ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেন। একইসঙ্গে তার নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮০ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় পড়ে।

এই অভিযোগে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান ‘স্বামীর সহায়তায়’ ৩ কোটি ৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে তার আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আরেকটি মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

শুধু দম্পতিই নয়, তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির ছায়া পড়েছে। শামীম ওসমান ও সালমা ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান ও মেয়ে লাবীবা জোহা অঙ্গনার বিরুদ্ধেও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন।

এর আগে, গত ২২ জুন ঢাকার একটি আদালত শামীম ওসমানের নামে থাকা উত্তরা ও পূর্বাচলের দুটি মূল্যবান প্লট জব্দের আদেশ দেন। একইসঙ্গে শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান, ছেলে ইমতিনান, মেয়ে লাবীবা জোহা অঙ্গনা এবং পুত্রবধূ ইরফানা আহমেদ রাশমীর নামে থাকা মোট ২৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। এসব অ্যাকাউন্টে মোট ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা রয়েছে।

দুদকের এই পদক্ষেপকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। শামীম ওসমান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ও আলোচিত নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে সম্প্রতি রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা কমে আসে এবং নানা কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন।

দুদকের অনুসন্ধান এবং মামলার অনুমোদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গন এবং প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এত বছর পর হঠাৎ করেই শামীম ওসমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কেন এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া হলো। কেউ কেউ বলছেন, এটি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কৌশল, আবার অনেকেই বলছেন, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের বাস্তব প্রতিফলন।

দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার অনুমোদন পেলেও তদন্ত এবং বিচারিক প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তবে তারা আশ্বাস দিয়েছেন, কারও রাজনৈতিক পরিচয় বা অবস্থান নয়, অপরাধের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সামনের দিনগুলোতে এই মামলাগুলো দেশের রাজনীতিতে ও প্রশাসনে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা না গেলেও, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া যে তীব্র হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন