শিরোনাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৪৪, ২৩ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২২, ২৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আসরের নামাজের পর উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সোহাগপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। মাসুকার পৈত্রিক বাড়ি জেলার নবীনগর উপজেলার চিলিকোট গ্রামে হলেও শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার বোনের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে মাসুকার মৃত্যুতে শোকাহত তার স্বজন-সহপাঠি, শিক্ষক। বাকরুদ্ধ ১৫ বছর আগে স্ত্রী হারানো মাসুকার বাবা মো. সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী।
মাসুকার বাবা সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি স্ত্রীকে হারান। বড়ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। ছোট মেয়ে মাসুকা ছিল তার কাছে মায়ের মতো। প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে তার মেয়ের সঙ্গে কথা হতো। প্রতি মাসে মেয়ে হাতখরচ বাবদ সাত-আট হাজার টাকা পাঠাতেন। মঙ্গলবার মাসুকার বড়বোনের বাড়িতে তাকে হতবাক হয়ে থাকতে দেখা গেছে। তিনি মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ।
মাসুকার দুলাভাই মো. খলিলুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে তারা মাসুকার খোঁজ নিচ্ছিলেন। অবশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত তাদের আত্মীয় ডা. তাসনোভার মাধ্যমে মাসুকার আহত হওয়ার খবর পান। তিনি ডা. তাসনোভার বরাত দিয়ে আরো জানান, আগুনে তার শরীরের প্রায় ৮০ ভাগের বেশি পুড়ে গিয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি হাসপাতালে মারা যান।
মাসুকার ভাগনি ফাহমিদা খানম নিধি কাদঁতে কাঁদতে জানান, তার খালা তাদের খুব আদর করতেন, খোঁজ-খবর নিতেন। খালা না থাকায় কে তাদের খোঁজ নেবে, এসব বলে কান্না করতে শুরু করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও সরকারি জিল্লুর রহমান কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আবু হানিফা বলেন, মাসুকা তার প্রিয় ছাত্রী ছিল। তার মৃত্যুতে তিনি শোকাহত। তিনি সরকারের কাছে দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ দাবি জানান।
ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. শাহাদৎ হোসেন এবং মো. সাইকুল ইসলাম মাসুকাসহ দুর্ঘটনায় নিহত সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা ও ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী শাহজাহান সিরাজ বলেন, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে নিজে প্রাণ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষক সমাজের গর্ব।
তিনি সরকারের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাসুকার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপনা নির্মাণের দাবি জানান।
নিহতের স্বজনেরা জানান, মাসুকা ১৯৮৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার চিলিকোট গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে মাসুকা সবার ছোট। তার বড় ভাই মো. কাউছার আহমেদ চৌধুরী মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রবাসী হিসেবে আছেন। জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের বিএনপির উপজেলা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে বড় বোন পাপড়ি রহমানের বিয়ে হয়।
মাসুকা ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে সাত-আট বছর আগে মাইলস্টোন কলেজে প্রাথমিক শাখার ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। গত সোমবার বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে কলেজ ভবনের ধসে পড়ার সময় তিনি একটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছিলেন। সোমবার রাতেই জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ