শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৫, ২৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হবে। কমিটি নিলাম প্রক্রিয়ার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে এবং আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
সম্পদের তালিকা: ইতোমধ্যে জব্দকৃত সম্পদের একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা দেখে নিলাম কমিটির সদস্যরা বিস্মিত হয়েছেন। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে পারেন! দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
কমিটির একজন সদস্য বলেন, ফ্ল্যাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তালিকা করার সময় মনে হয়েছে, আমরা ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্কোস ও ইমেলদা মার্কোসের সম্পদের তালিকা তৈরি করছি। আশির দশকে দুনিয়া কাঁপানো মার্কোস দম্পতির কথা মনে পড়ে গেল। ইমেলদা মার্কোসের জুতা, ব্যবহৃত পোশাক, অন্য সামগ্রী ও প্রসাধনের মুখরোচক সংবাদ ওই সময় আলোচিত ছিল। এ যেন বেনজীর দম্পতির সঙ্গে ফিলিপাইনের মার্কোস দম্পতির রাশি জাতকের মিল!
ব্যক্তিগত সামগ্রী: ওই সদস্য আরো জানান, বেনজীরের এই আলিশান ফ্ল্যাটে জব্দ তালিকার ২৪৬টি আইটেমের মধ্যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করলেই পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। শুধু একটি ভবনের ফ্ল্যাটেই পাওয়া তাদের ব্যবহৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- শার্ট: ১২২টি, প্যান্ট: ২৬৬টি, ব্লেজার: ৩০টি, স্যুট: ৮টি, টি-শার্ট: ৭২২টি, পাঞ্জাবি: ২২৪টি, পায়জামা: ৪৭টি, স্যান্ডেল: ৮৮ জোড়া, কেডস: ৩৫ জোড়া, জুতা: ৩৮ জোড়া, শাড়ি: ৪৯৪ টি, থ্রি–পিস: ২৫০ সেট, সালোয়ার-কামিজ: ৪৯৬টি, ব্লাউজ: ৬৫টি, জামা: ২১২টি, জ্যাকেট: ৫৬টি, বেডশিট: ১০৯টি, লেডিস ভ্যানিটি ব্যাগ: ৭৫টি, লেডিস টপস: ৬২২টি, সোয়েটার (পুরুষ): ১১টি, সোয়েটার (লেডিস): ৩৪টি, লেডিস প্যান্ট: ৩৫৫টি, লেডিস টি-শার্ট: ২৮টি, নাইট ড্রেস: ৫৮টি, ওড়না: ৩৪৭টি, শাল চাদর: ৮৯টি, শীতের জামা: ১৩২টি, লেহেঙ্গা: ১৬টি, সানগ্লাস: ৩৪টি, ট্রাউজার: ৬৭টি।
এ ছাড়া বডি স্প্রে ও পারফিউম, ড্রয়িংরুম, বৈঠকখানা, থিয়েটার রুম, করিডর বৈঠকখানা, কিচেন রুম, মাস্টার বেডসহ অন্যান্য বেডরুমের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট: গুলশানের র্যানকন টাওয়ারের চারটি আলিশান ফ্ল্যাটকে একত্রিত করে বেনজীর দম্পতি এই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটটি তৈরি করেন। এতে সুইমিং পুল, মিনি থিয়েটার রুম, অতিথি বিনোদন বৈঠকখানাসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। অনুসন্ধান টিম জানিয়েছে, পুরো ফ্ল্যাটে ১৯টি ফ্রিজ এবং প্রায় ১০০ টন এসি রয়েছে। সুইমিংপুলে ব্যবহৃত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীও ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে।
তবে, ফ্ল্যাটের খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি, ওয়ার্ডরোবসহ মূল্যবান সামগ্রীগুলো এই প্রাথমিক নিলামের বাইরে রাখা হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিলাম কমিটি: আদালত কর্তৃক গঠিত নিলাম কমিটিতে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিধি, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একজন প্রতিনিধি এবং ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তরের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি। দুদকের উপপরিচালক (সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
বেনজীরের অর্থ পাচার ও দেশত্যাগ: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই ২০২৪ সালের ৪ মে মিথ্যা ঘোষণায় নতুন পাসপোর্ট বানিয়ে বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী–কন্যাদের নিয়ে গোপনে দেশ ছাড়েন। দুদক তদন্ত টিম ও নিলাম কমিটির সদস্যদের মতে, বেনজীর দম্পতি গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগভর্তি স্বর্ণালংকার, টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে দুদক ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে