ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৭

বাল্যবিবাহ রোধে ত্বরিত পদক্ষেপ চৌহালীর ইউএনও’র

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৩:০৬, ১২ জুলাই ২০২৫

বাল্যবিবাহ রোধে ত্বরিত পদক্ষেপ চৌহালীর ইউএনও’র

ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

যমুনা বিধৌত চৌহালীর চরজাজুরিয়া নামেই যেন নিভৃত কোনো বাংলা গ্রামের ছবি। সেখানে শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঘটতে যাচ্ছিল এক নিঃশব্দ অথচ ভয়ানক অপরাধ, দুই কিশোরীকে শিশুকালেই তুলে দেওয়া হচ্ছিল বিবাহবন্ধনে। একটানা বয়ে চলা নদীর মতোই তাদের স্বপ্নগুলোও হয়তো গড়াতে পারতো অন্ধকারের গহ্বরে, যদি না সময়মতো পৌঁছে যেতো প্রশাসনের হাত।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ত্বরিত পদক্ষেপে বন্ধ হলো সেই দুই বাল্যবিবাহ। খবর পেয়ে জুমার নামাজের পর তিনি ছুটে যান ঘটনাস্থলে, চরজাজুরিয়ার দুটি বাড়িতে তখন বরযাত্রী উপস্থিত, সাজসাজ রব। অথচ বয়সে অনির্ধারিত, পড়াশোনার পথে থাকা দুটি কিশোরী ছিলো সেই বিয়ের মূল চরিত্র।

ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ের যাবতীয় আয়োজন বন্ধ করে দেন। জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে দেখানোর প্রমাণও মেলে। কনের পরিবারকে সতর্ক করে মুচলেকা নেওয়া হয়, বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভাবেই তাদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। তদুপরি, দুই পরিবারের প্রতি কিশোরী কন্যাদের শিক্ষাজীবন যেন অব্যাহত থাকে, সে নির্দেশনাও দেন তিনি।

ঘটনাস্থলে ইউএনও’র সঙ্গে ছিলেন চৌহালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোয়েবুর ইসলাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপি সদস্যবৃন্দ, আনসার সদস্য ও থানা পুলিশ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাল্যবিবাহ শুধু একটি অবাধ্য আইন লঙ্ঘনই নয়, এটি একটি কিশোরীর স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার নামান্তর। আমরা দুটি মেয়ের ভবিষ্যৎকে অন্তত এই মুহূর্তে বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু সমাজকে সচেতন না করলে এমন অন্যায় আবারও ফিরে আসবে।’

তিনি আরো বলেন, “বাল্যবিবাহ একজন নারীর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তো বাড়ায়ই, একই সঙ্গে কেড়ে নেয় তার শৈশব ও ভবিষ্যৎ। তাই প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। কোথাও এমন কিছু চোখে পড়লে দয়া করে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন।”

এই ঘটনাটি যেন শুধুই প্রশাসনের সাফল্য নয়, এটি একটি সমাজের দায়বদ্ধতা, একটি কিশোরীর জীবনে ফিরে আসা সূর্যের আলো, এক গোপন কান্নাকে থামিয়ে দেওয়ার মানবিক আহ্বান।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন