শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৯, ২ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৫৩, ২ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক (সম্প্রতি বহিষ্কৃত ) জানে আলম অপু সম্প্রতি তিন লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলটি কেনে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, শুক্রবার (১ আগস্ট) অপুর ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছে পুলিশ।
এ ছাড়া অপুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহামাম্মপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসা থেকে চাঁদার টাকায় কেনা মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। ইয়ামাহা এফজেড-এক্স ব্রান্ডের মোটরসাইকেলটি তিন লাখ সাত হাজার টাকা দিয়ে কেনেন অপু।
এর আগে শুক্রবার সকালে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকা থেকে জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অপুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ মিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারের পর অপুকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাকে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযানে নামে পুলিশ।
ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় মোট ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চাঁদাবাজির সঙ্গে আর কারা জড়িত আছেন সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
তিনি আরো বলেন, সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন অপু ও তার সহযোগীরা। তারা গত ১৭ জুলাই শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ভয়ভীতি দেখান। বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামীর থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। বাকি ৪০ লাখ টাকা আনতে গত ১৯ জুলাই ফের ওই বাসায় যান তারা। পরে ২৬ জুলাই আরো লোকজন নিয়ে বাসায় গেলে পুলিশকে খবর দেয় ভুক্তভোগী পরিবার। পুলিশ গিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান অপু।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে অপু ও রিয়াদ সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামীর থেকে টাকার ব্যাগ নিচ্ছেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত ২৬ জুলাই ৫ জন গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন অপু। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
অভিযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপু গ্রেপ্তার এড়াতে বাব বার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। সর্বশেষ গোপীবাগের একটি বাসা থেকে বের হয়ে পাঠাও মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টাকালে অপুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গুলশানের চাঁদাবাজির ঘটনায় হওয়া মামলার ২ নম্বর আসামি অপু।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১০ লাখ টাকা চাঁদার পাঁচ লাখ করে নেন রিয়াদ ও অপু।
থানা সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আমিনুল ইসলাম।
তাদের প্রত্যেককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আমিনুল ছাড়া অপর চারজন রিমান্ডে রয়েছেন। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোত দিনের রিমান্ডের পঞ্চম দিন শুক্রবারও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের।
কোথায় কার কাছে টাকা রেখেছে তার বিস্তারিত তথ্য তদন্তসংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন রিয়াদ। এ ছাড়া রিয়াদের একাধিক বাসার সন্ধান পায় পুলিশ। সেসব বাসায় বিলাসী জীবন কাটাতেন রিয়াদ। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডার বৈকাল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চাঁদাবাজির দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
বুধবার রাতে বাড্ডার বাসায় অভিযান চালায় গুলশান থানা পুলিশ।
অভিযানসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেস বাসাটির একটি কক্ষে থাকতেন রিয়াদ। সেখানেই রাখেন এমপি শাম্মীর স্বামীর থেকে নেওয়া চাঁদার টাকার একটি অংশ। এর আগে রিয়াদের রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসা থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি চেক ও ২০ লাখ টাকার ১০টি এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট) স্লিপ উদ্ধার করে পুলিশ।
গুলশান থানা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীতে সন্ধান পাওয়া রিয়াদের দুটি বাসার মধ্যে একটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায়, আরেকটি বাড্ডার বৈকাল এলাকায়। দুটির মধ্যে বাড্ডার বাসায় তিনি নিয়মিত থাকতেন। আর রাজাবাজারের বাসায় মাঝেমধ্যে যেতেন। বাড্ডার বাসাটি মেস বাসা। জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড্ডার বাসা থেকে টাকা উদ্ধার হয়।
শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রিয়াদসহ কয়েকজন তা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের টাকা রিয়াদ বাড্ডার বাসায় রাখেন।
এর আগে বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদের বাসা থেকে চেক উদ্ধারের বিষয়টি জানানো হয়। সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নিয়েছে রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে। ট্রেড জোনের পোশাক কারখানাসহ নানা ব্যবসা রয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ