শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪১, ৩ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর অনুমতি সাপেক্ষে এই বিচার কার্যক্রম আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করবেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
এই প্রথম রাজসাক্ষী হিসেবে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তবে আজ তার হাতে কোনো হাতকড়া ও মাথায় হেলমেট দেখা যায়নি। এদিন সকালে তাকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে স্বাভাবিকভাবে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।
এ সময় নিরাপত্তা জোরদার করতে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও প্রবেশদ্বারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসময় সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
শেখ হাসিনা ও আসামিদের বিরুদ্ধে এই মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। সেই নির্দেশের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগ, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই প্রথম কোনো মামলা, যেখানে হাসিনার কারাদণ্ড হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলা রয়েছে। আগামী ২৪ আগস্ট এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত রয়েছে।
এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলাতেও। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা আগামী ১২ আগস্ট।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ