ঢাকা, সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫

১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
এনসিপির ২৪ দফা ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা
Scroll
আগামী ৫ বা ৮ আগস্টে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
Scroll
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য শুরু, সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে বিচার
Scroll
পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হবে এ মাসেই
Scroll
ঢাকায় আজ তিন সমাবেশ, দুই পরীক্ষা: যান চলাচলের বিশেষ নির্দেশনা ডিএমপির
Scroll
বিমান বিধ্বস্তের ১৪ দিনের মাথায় খুলেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
Scroll
পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, নিহত ২
Scroll
পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক শমশের আলী ইন্তেকাল করেছেন
Scroll
গাজায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষকে গুলি, নিহত আরো ৬২ জন
Scroll
নারী কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে শিরোপা ব্রাজিলের

ফ্লাইট এক্সপার্ট কাণ্ড

গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, তিনজনের জামিন নামঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮:৩৯, ৩ আগস্ট ২০২৫

গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, তিনজনের জামিন নামঞ্জুর

ছবি: সংগৃহীত

দেশের আলোচিত অনলাইন বিমান টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্ট–এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার তিন কর্মীর জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।

রবিবার (৩ আগস্ট) জামিন শুনানির সময় ঢাকা মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘৫-৬ হাজার কোটি টাকা একদিনে সরানো যায় না। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ, তাই আসামিদের জামিন দেওয়া যাচ্ছে না। তারা কারাগারে থাকবেন।’

এর আগে, শনিবার রাতে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার পর পুলিশ ফ্লাইট এক্সপার্টের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন: সাকিব হোসেন (৩২) – হেড অব ফাইনান্স, সাঈদ আহমেদ (৪০) – চিফ কমার্শিয়াল অফিসার, এ কে এম সাদাত হোসেন (৩২) – চিফ অপারেটিং অফিসার।

মামলার পটভূমি ও অভিযোগ

মামলাটি করেন সরকার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস–এর মালিক বিপুল সরকার। তাঁর অভিযোগ, ফ্লাইট এক্সপার্ট তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং, হজ ও ওমরার প্যাকেজসহ বিভিন্ন ভ্রমণসেবা দিয়ে আসছিলেন। এর মাধ্যমে হাজার হাজার এজেন্সি ও লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে তাদের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

শনিবার হঠাৎ করে ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায় এবং কোম্পানির এমডি সালমান বিন রশিদের বিদেশ পালানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই শত শত গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মতিঝিলের ফ্লাইট এক্সপার্টের অফিসে ভিড় করতে থাকেন।

আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য

রবিবার আদালতে হাজির করা হলে আসামিদের পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, গ্রেপ্তার তিনজন কেবল কর্মচারী ছিলেন এবং ঘটনার শিকার। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউকে কিছু না জানিয়েই দেশত্যাগ করেছেন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।

অপরদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী আফজাল হোসেন মৃধা বলেন, মামলার মূল দুই আসামি—ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি সালমান বিন রশিদ ও মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় হাজারের বেশি মানুষ হজ ও ওমরার টাকা দিয়েছেন, যা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসামিরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, তাদের জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘এরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। জামিন দেওয়া হলে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হবে।’

আদালত সবপক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন নামঞ্জুর করে তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পেছনের গল্প ও প্রতারণার ধরন

জানা যায়, ফ্লাইট এক্সপার্ট মূলত মক্কা গ্রুপ–এর একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। কোম্পানির এমডি সালমান বিন রশিদের বাবা এম এ রশিদ দীর্ঘদিন ধরে ‘মক্কা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর মাধ্যমে হজ ও ওমরার প্যাকেজ পরিচালনা করে আসছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালের মার্চে ফ্লাইট এক্সপার্ট চালু করা হয়।

এই প্ল্যাটফর্ম থেকে গ্রাহকরা দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট, হোটেল বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রসেসিং সেবা গ্রহণ করতেন। সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট বুকিংয়ের সুযোগ থাকায় এটি দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায়।

তবে হঠাৎ ওয়েবসাইট বন্ধ হওয়া এবং কর্তৃপক্ষের গা-ঢাকা দেওয়ার ঘটনায় স্পষ্ট হয়, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত প্রতারণা। শনিবার সকাল থেকেই অনলাইন সেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং মতিঝিলের সিটি সেন্টারে অবস্থিত কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা

গ্রেপ্তার হওয়া সাঈদ আহমেদ শনিবার রাতেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছিলেন, যেখানে উল্লেখ করেন—ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবারসহ বিদেশ চলে গেছেন। কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধের কথা জানিয়ে দেন তিনি।

জিডি করতে যাওয়া অন্য দুই কর্মচারীও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ

মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দীন জানান, মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও এমডি সালমান বিন রশিদ ও তার বাবা এম এ রশিদ–কে আসামি করা হয়েছে। তারা বর্তমানে পলাতক এবং দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় বড় ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তদন্ত চলছে, যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ও মোট আত্মসাতের অঙ্ক নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

এই ঘটনা দেশের ট্রাভেল ও অনলাইন বুকিং ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের বিশ্বাসের সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন