শিরোনাম
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:৫৮, ২ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২৪, ২ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
মাদী হাতিটির বয়স প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর। গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আসা মেডিক্যাল টিম ও নালিতাবাড়ী প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিক্যাল টিম মিলে সেটিকে চিকিৎসা দেয়।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় তিন-চার মাস আগে বল্লম জাতীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। এতে তার পায়ে তিন-চার ইঞ্চি দীর্ঘ আর প্রায় ছয় ইঞ্চির মতো গভীর ক্ষত হয়। সে কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আমরা পাহাড়ে এসে হাতিটির আঘাত পাওয়া স্থানে ড্রেসিং করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বনে ছেড়ে দিয়েছি।
বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী বলেন, পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসা ওই হাতিকে অসুস্থ দেখতে পান স্থানীয়রা। তারা বনবিভাগকে খবর দিলে তিন দিন ধরে হাতিটির সন্ধানে খোঁজাখুঁজি চলে। একপর্যায়ে দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ে হাতিটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নালিতাবাড়ী প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন শাকিব হোসেন সাগর বলেন, হাতিটি পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিল। ডার্টগানের মাধ্যমে সেটিকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। পরে কাছে গিয়ে দেখা যায় ডান পায়ে ক্ষত হয়ে পুঁজ জমেছে। এরপর ড্রেসিং করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ও অন্যান্য ওষুধ লাগিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পাঁচ ঘণ্টা ধরে হাতিটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেটি নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে বনের দিকে চলে যায়।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাতিটি এক সপ্তাহ ধরে দলছুট হয়ে জঙ্গলে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। গত মঙ্গলবার থেকে শেরপুর বন বিভাগ, মধুটিলা ইকোপার্ক রেঞ্জ ও স্থানীয় লোকজন হাতিটির খোঁজে জঙ্গলে অভিযান চালান। বুধবার বিকালে সীমান্তবর্তী দাওধারা-কাটাবাড়ি এলাকার জঙ্গলে হাতিটির অবস্থান শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে হাতিটিকে জঙ্গলের পাশে একটি জলাশয়ের ধারে ঝিমোতে দেখা যায়। তখনই শুরু হয় তার চিকিৎসা।
বন্য হাতির চিকিৎসা অভিযানে আরো অংশ নেন গাজীপুর সাফারি পার্কের ল্যাব টেকনিশিয়ান আতিকুর রহমান ভূঁইয়া, ভেটেরিনারি সার্জন সাকিব হোসেন, সহকারী মোস্তফা কামাল, শেরপুর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মো. আবদুল্লাহ আল আমিন, মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী ও সমশ্চড়া বিট কর্মকর্তা মো. কাউসার হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটাবাড়ি, বুরুঙ্গা ও কালাপানি এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে ৩০-৩৫টি বন্য হাতির একটি দল পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আহত হাতিটি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ছিল।
প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শেরপুর কার্যালয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির বলেন, কয়েক দিন আগে অসুস্থ হাতিটির খবর পান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। গত মঙ্গলবার থেকে হাতিটির খোঁজ নিতে শুরু করেন। বুধবার বিকালে সীমান্তবর্তী ধাওদারা-কাটাবাড়ি এলাকায় হাতিটির সন্ধান মেলে। বৃহস্পতিবার সকালে একটি জলাশয়ের কাছে হাতিটি দাঁড়িয়ে ঝিমাচ্ছিল। এ সময় চেতানাশক দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে হাতিটি জঙ্গলে হেঁটে চলে গেছে। হাতিটি পর্যবেক্ষণ করতে বন বিভাগকে বলা হয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ