শিরোনাম
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১৭:৩৮, ১৮ আগস্ট ২০২৫
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি দিয়ে ফারুকের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। তবে আলোচনায় আসেন ১৯৭৫ সালে খান আতাউর রহমানের সুজন সখী সিনেমার মাধ্যমে। সুজন চরিত্রে তাঁর সহজাত অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে দেয়। এর পরের বছর আমজাদ হোসেনের নয়নমনি ছবিতে নয়ন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি পৌঁছে যান আরেক উচ্চতায়। ১৯৭৮ সালের সারেং বউ-এ কদম সারেং হয়ে ফারুক শুধু একটি চরিত্রই সৃষ্টি করেননি, হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর অভিনয় গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিতে। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক মতিন রহমানের মতে, আড়াই মিনিটের একটানা শটে বিষক্রিয়ায় ভোগা মিলনের যন্ত্রণা মুখভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলা বাংলাদেশের সিনেমায় বিরল উদাহরণ। অভিনয়ের প্রতি ফারুকের নিবেদন ও মনোযোগ ছাড়া এমন অভিনয় সম্ভব হতো না।
সত্তর ও আশির দশক ছিল ফারুকের স্বর্ণযুগ। লাঠিয়াল, আবির্ভাব, লাল কাজল, সুজন সখী, নয়নমনি—প্রতিটি সিনেমায় তিনি ছিলেন পরিচালকদের প্রথম পছন্দ। গ্রামের তরুণ, বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি কিংবা আবেগপ্রবণ প্রেমিক—সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন স্বাভাবিক ও সাবলীল। এ কারণেই দর্শক তাঁকে চিরকাল মনে রেখেছে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে।
চলচ্চিত্র শিক্ষক মতিন রহমানের ভাষায়, “ফারুক গ্রামীণ মানুষের স্বভাবগত জিদ, তাড়না ও প্রতিবাদকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। তাঁর সহজাত ভঙ্গি অন্য কোনো শিল্পীর মধ্যে দেখা যায়নি। তাই তিনি সবার কাছে হয়ে উঠেছেন মিয়া ভাই।”
তবে আশির দশকের শেষভাগ থেকে গ্রামীণ পটভূমির সিনেমা কমতে থাকে। চলচ্চিত্র শহরকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে, ফলে ফারুকের মতো গ্রামীণ নায়কের চাহিদাও কমে যায়। তা সত্ত্বেও তাঁর অভিনয়ের স্বকীয়তা আর দর্শকের ভালোবাসা তাঁকে রেখেছে বিশেষ মর্যাদায়।
ফারুকের জন্ম মানিকগঞ্জের ঘিওরে। বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায় হলেও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সান্নিধ্যে এসে তিনি রপ্ত করেছিলেন আঞ্চলিক স্বভাব-ভাষা। সেটিই তিনি জীবন্ত করে তুলেছিলেন সিনেমার পর্দায়।
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—লাঠিয়াল সিনেমার জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা। তিনি শুধু নায়কই নন, ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সক্রিয় রাজনীতিবিদও।
২০২৩ সালের ১৫ মে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফারুক। কিন্তু দর্শকের কাছে তিনি আজও সেই গ্রামীণ তরুণ—নয়ন, সুজন, কদম সারেং কিংবা মিলন—যিনি বাংলার মাটির মানুষকে অমরত্ব দিয়েছেন সিনেমার পর্দায়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ