ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫

১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৭ সফর ১৪৪৭

সরকার উৎখাতে চক্রান্ত

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আগস্ট মাস জুড়ে পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:০৩, ১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৪, ১ আগস্ট ২০২৫

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আগস্ট মাস জুড়ে পরিকল্পনা

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনায় নেমেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। সরকারের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলটি ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাছাইকৃত ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য দেশে অস্থিরতা তৈরি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করা।

এই প্রশিক্ষণের অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা—সাদেকুল হক সাদেক। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেজর সাদেক বর্তমানে তাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগস্ট মাস জুড়ে নাশকতার একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ প্রায় আড়াই হাজার ক্যাডারকে রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কাটাবন ও পূর্বাচলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

বিশেষ করে ৮ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আড়াইশ'র বেশি ক্যাডারকে ‘কর্মশালার’ নামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টোকেনের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যেগুলো মিরপুর ডিওএইচএসে পূর্বনির্ধারিত এক সভার মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

নাশকতা পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের অভিযোগে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা এবং মেহেরপুরের যুবলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান রিটন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

শুধু ভাটারায় নয়, পূর্বাচলের সি-শেল রিসোর্ট, কাটাবন ও মিরপুরে আরো তিনটি স্থানে একই ধরনের প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সশস্ত্র এবং ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ কৌশল শেখানো হয়।

সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকায় লাখো নেতাকর্মীর জড়ো হয়ে বিমানবন্দর ও শাহবাগ এলাকায় দখল প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এই চক্রান্তে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন মেজর সাদেক, যার সহায়তায় ছিলেন তার স্ত্রী, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমাইয়া জাফরিন। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তারা ক্যাডারদের সংগঠিত করেন।

এই ষড়যন্ত্রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কলকাতায় অবস্থান করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তাকে সহায়তা করছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

এ ছাড়া ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নির্দেশনায় কৌশলগত সহযোগিতা করছেন দিল্লিতে অবস্থান করা পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে ঢাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব ক্যাডারকে শনাক্ত করেছে। অর্থায়নকারী ব্যবসায়ীদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তদন্তে আরো জানা গেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরো কয়েকজন প্রশিক্ষক ছিলেন। ওই কনভেনশন সেন্টার ভাড়া দিয়েছিলেন বায়জিদ নামের এক ব্যক্তি, যার বাড়ি গোপালগঞ্জে। প্রশিক্ষণের দিন সেন্টারটির সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়, যা পরিচালনায় সহায়তা করেন ম্যানেজার নিজে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা জানান, ‘মেজর সাদেক বর্তমানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং কোনো ধরনের নাশকতা পরিকল্পনা থাকলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সতর্ক রয়েছে।’

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন