শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৪১, ১৯ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৪৩, ১৯ জুন ২০২৫
ঠাকুরগাঁও-১, অর্থাৎ সদর আসনটি মির্জা ফখরুলের ‘ঘরের মাঠ’। অতীতে একাধিকবার এই আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। দলের কৌশলগত সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না এলে দলীয় মনোনয়ন তার হাতেই যাবে, তা প্রায় নিশ্চিত। দলের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে তার পক্ষে জনসংযোগ ও প্রচারণা জোরদার করছেন।
এই আসনে মির্জা ফখরুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হওয়া দেলোয়ার মাঠ পর্যায়ে তৎপর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয়। তিনি ঈদুল আজহার সময়জুড়ে ভোটারদের সঙ্গে জনসংযোগ করেছেন।
এ ছাড়া একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের অন্যতম হলেন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁও শাখার সদস্য সচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহাবুব আলম রুবেল। রাজপথের লড়াকু এই নেতা নিজেকে গরিব-মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরছেন। তার বক্তব্য, “আমি নিজেও কখনো ভোট দিতে পারিনি। এবার চাই একটি সুষ্ঠু, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নির্বাচন, যেখানে সবাই প্রার্থী হতে পারে।”
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে তরুণ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৭ এবং সংখ্যালঘু ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার। নির্বাচনের ফল নির্ধারণে এই দুই শ্রেণির ভোটারই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা। প্রার্থীরা তাই তাদের মন জয় করতেই এখন মরিয়া।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার না এলে তারা প্রান্তিক হয়ে পড়বেন। জামানতের বিধিনিয়ম সহজ করে, অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো পদ্ধতি চালু করলে তবেই সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তাদের দাবি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জয় তো প্রার্থীর হয় না, হয় ভোটারের। ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত বিজয়।”
অন্যদিকে দেলোয়ার হোসেন বলছেন, ‘আমার এলাকার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে, যুবসমাজকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ঠাকুরগাঁওকে। সবাইকে পাশে চাই।’
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে গত কয়েক দশকে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির খাদেমুল ইসলাম (১৯৮৬, ১৯৯১), বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (১৯৯৬-ফেব্রুয়ারি, ২০০১), এবং আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন (১৯৯৭ উপ-নির্বাচন, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪)। তবে এসব নির্বাচনের অনেকগুলোই ছিল বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আশা করি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হব।’
একদিকে বিএনপির মহাসচিবের রাজনৈতিক প্রভাব, অন্যদিকে জামায়াতের মাঠ তৎপরতা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা—এই তিন ধারা ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনে তৈরি করছে এক রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের সম্ভাবনা। তবে জয়-পরাজয়ের মীমাংসা নির্ধারিত হবে ভোটারদের সিদ্ধান্তেই।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ