শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৩১, ৩০ জুন ২০২৫
ইরানের এই কর্মসূচি থামাতে নানা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন—কেউ দিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা, কেউ করেছেন চুক্তি। ২০১৫ সালে একবার সমঝোতা হলেও তা ভেঙে যায়। এরপর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ায়। শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। কিন্তু আদৌ এতে ইরানের কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—তা আজও পরিষ্কার নয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সূচনা কিন্তু শান্তিপূর্ণ প্রয়াস হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে। ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের ভাষণে উঠে আসে এক নতুন ধারণা—পারমাণবিক শক্তিকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা।
এর ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে আইএইএ এবং বিশ্বব্যাপী ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চুল্লি নির্মাণ, প্রযুক্তি, এবং ইউরেনিয়াম সরবরাহ করতে শুরু করে। ভারত, ইসরায়েল, পাকিস্তানসহ ইরানও এই কর্মসূচির সুবিধাভোগী দেশ হিসেবে যুক্ত হয়।
১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির আমলে এই কর্মসূচির ভিত গড়ে ওঠে।
১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানে একটি গবেষণা চুল্লি দেয়, সঙ্গে উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। ১৯৭৪ সালে ইরান পারমাণবিক শক্তি সংস্থা গঠন করে এবং বড় পরিসরে কর্মসূচি বিস্তারের ঘোষণা দেয়। কিন্তু প্রকৌশলী সংকট ছিল মারাত্মক।
ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি-তে ইরানিদের জন্য একটি মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করতে চায়, বিনিয়োগও করে। কিন্তু সেখানে প্রতিবাদ শুরু হয়—তাদের ভয় ছিল, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর শাহ ক্ষমতা হারান, এবং ওয়াশিংটন-তেহরান পারমাণবিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নতুন সরকার প্রথমে কর্মসূচি বাতিল করে। কিন্তু পরে এর কৌশলগত গুরুত্ব অনুধাবন করে গোপনে তা পুনরায় শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অ্যাটমস ফর পিস’ প্রকল্প শান্তিপূর্ণ গবেষণার আড়ালে অনেক দেশকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল সবাই এই কর্মসূচির প্রশিক্ষণভুক্ত ছিল এবং পরে অস্ত্র তৈরি করে।
তবে এই কর্মসূচি পুরোপুরি নেতিবাচক ছিল না বলেও মত রয়েছে। অনেক দেশ—যেমন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া—এই কাঠামোর মধ্যেই নিয়ন্ত্রিত থেকেছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ইতিহাস আসলে এক যুগপৎ শান্তি ও যুদ্ধের গল্প। একদিকে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক অবিশ্বাস। 'অ্যাটমস ফর পিস' ছিল এক উচ্চাশার নাম—কিন্তু তার ফলাফল প্রমাণ করেছে, পরমাণু প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ কোনো সহজ বিষয় নয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ