শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৪১, ২ জুলাই ২০২৫
স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলে দাবানল নেভাতে গিয়ে মঙ্গলবার দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে দমকলকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানানো হয়, কসকো শহরের তোররেফেতা এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর একটি খামারের মালিক ও তার এক কর্মচারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই দাবানল মঙ্গলবার রাতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তোররেফেতা ও ফ্লোরেজাকস এলাকায়। বুধবার দমকল বাহিনী জানায়, তারা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টরজুড়ে আগুনের বিস্তার ঠেকাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জুন ছিল দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ জুন মাস। ওই মাসে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সাধারণত দেখা যায় জুলাই-আগস্টের মতো গ্রীষ্মের মধ্যভাগে। দক্ষিণাঞ্চলের কর্ডোবা শহরে আজ বুধবার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফ্রান্সেও তাপদাহ প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। দেশটির পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ের-রুনাশে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার গরমজনিত অসুস্থতায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একই দিনে তাপমাত্রাজনিত সমস্যায় ৩০০ জনের বেশি মানুষকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। ফ্রান্সের চারটি বিভাগ—ওব, শের, লোয়ারে ও ইয়োনে— বর্তমানে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্টে’ রয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, মেটজ শহরে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে, যদিও পূর্বাঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
১৯০০ সালের পর এবারই দেশটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ জুন মাসের অভিজ্ঞতা পেয়েছে।
ইতালির পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। দেশটির ভিচেনজা প্রদেশে মঙ্গলবার দুপুরে দুটি নির্মাণ শ্রমিক গর্তে কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন কোমায় চলে গেছেন এবং হেলিকপ্টারে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ফ্লোরেন্স শহরে অতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে বৈদ্যুতিক তার গরম হয়ে সংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। এতে দোকান, হোটেল, বাড়ি এমনকি এটিএম মেশিন পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে। বার্গামো শহরেও একই কারণে বিকেল ৪টা থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত শহরের অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের চরম তাপপ্রবাহ এখন আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ‘আর্বান হিট আইল্যান্ড’ প্রভাবের কারণে তাপমাত্রা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। পিচঢালা রাস্তা, ভবন ও যানবাহনের ঘনত্ব মানুষের শরীরের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে এবং মৃত্যুঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধারা অব্যাহত থাকলে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলেই এমন ভয়াবহ তাপপ্রবাহ নিয়মিত চেহারা নিতে পারে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ