ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৭ মুহররম ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার রায় আজ
Scroll
বান্দরবানের রুমায় দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের কমান্ডারসহ দুই সদস্য নিহত
Scroll
সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
Scroll
চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে
Scroll
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে আরো ৪৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
Scroll
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা
Scroll
পদত্যাগপত্র জমা দিলেন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা পরিচালক চিত্রশিল্পী ও শিল্প সমালোচক মোস্তফা জামান
Scroll
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৬৫ যাত্রী নিয়ে ফেরিডুবি, নিখোঁজ ৪৩

আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সাখাওয়াতের বিসিবিতে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩:৪১, ৩ জুলাই ২০২৫

আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সাখাওয়াতের বিসিবিতে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

মো. সাখাওয়াত হোসেন । ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) উপদেষ্টা হিসেবে মো. সাখাওয়াত হোসেনের নিয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক সম্পর্ক এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ‘অপেশাদার ও অস্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাছাড়া বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, উপদেষ্টা হতে হলে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতা থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ সাখাওয়াত হোসেনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট পরিচিতি নেই। তিনি একজন হোটেল ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

বিসিবির গঠনতন্ত্রের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বোর্ড উপদেষ্টা হিসেবে “দেশের খ্যাতনামা ক্রিকেটার কিংবা প্রখ্যাত ক্রিকেট সংগঠকদের” মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাখাওয়াতের নিয়োগে সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে সাবেক ক্রিকেটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ক্রিকেটার বলেন, “যারা সারা জীবন ক্রিকেটে কাটিয়েছেন, তারা আজ পাশে পড়ে আছেন। অথচ অচেনা মানুষ পদের মালিক। এটা খুবই হতাশাজনক।”

ফ্যাসিস্ট সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়কালে বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন সাখাওয়াত হোসেন। হোটেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তার পরিচিতি ক্রমশ বাড়ে। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ত্রাণ তহবিলে ২ কোটি টাকার অনুদান দেন, যা অনেকের মতে একটি ‘রাজনৈতিক বিনিয়োগ’। পরবর্তীতে সে বিনিয়োগের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

সাখাওয়াতের ঘনিষ্ঠদের তালিকায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং বিতর্কিত ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। একাধিক সূত্র জানায়, হারুনের কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নির্মাণে সাখাওয়াতের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। রিসোর্ট উদ্বোধনের দিন সাখাওয়াত হোসেন মিঠামইনও গিয়েছিলেন।

উদ্বোধনের পরও বেশ কয়েকবার সাখাওয়াত হোসেনকে ডিবি হারুনের প্রেসডিডেন্ট রিসোর্টে দেখা গেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকার পরও তাকে বিসিবির অভ্যন্তরে জায়গা করে দেয়া হয়েছে যা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সরাসরি পরিপন্থী।

বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সংবাদমাধ্যমে জানান, “ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের পর্যটনকে তুলে ধরতেই ট্যুরিজম উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।” অন্যদিকে, আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বোর্ডে একজন উপদেষ্টা লাগবেই। প্রয়োজনে আমরা পরামর্শ নেব।”

তবে ক্রিকেট অঙ্গনের অনেকেই বলছেন, বিসিবি আবার ভ্রান্ত রাজনীতির আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। একজন ক্রিকেট বিশ্লেষকের ভাষায়, “এ ধরনের নিয়োগ বোর্ডের পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটা ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক।”

প্রশাসনে ‘প্রটেকশন নেটওয়ার্ক’ গঠনের অভিযোগ

সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সম্পর্ককে ব্যবহার করে ‘প্রটেকশন নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। বিসিবির মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যক্তির অনুপ্রবেশ বোর্ডের গ্রহণযোগ্যতাকে চরমভাবে আঘাত করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। একইভাবে, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকেও সরাসরি আঘাত করে। 

সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পারিবারিকভাবে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার চাচা জাকির হোসেন মিয়া আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ২০২৪ সালে। তখন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

জানা গেছে, সাখাওয়াত হোসেনের আপন ছোট ভাইসহ পরিবার-আত্মীয়স্বজনের অনেকেই আওয়ামী লীগের পদধারী ছিলেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে এসব সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নানান সুবিধা ভোগ করেছেন বলে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

আওয়ামী লীগ আমলে ওই সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সাখাওয়াত হোসেনের ওঠা-বসা ছিল। ক্রিকেট পর্যটনকে জনপ্রিয় করার জন্য এমন লোকই কেন বেছে নিতে হলো- সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তার জন্য যোগ্য আরো অনেকে ছিলেন বলে সাবেক ক্রিকেটারদেরও কেউ কেউ মনে করেন।

মো. সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য

এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পেশাগত কারণে নানান সময়ে অনেকের সঙ্গে আমাকে ছবি তুলতে হয়েছে। বিএনপির অনেকের সঙ্গেও আমার ছবি আছে। এটা আমার কোনো দলের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের প্রমাণ দেয় না।”

তিনি বলেন, “আমি ক্রিকেট পর্যটন নিয়ে কাজ করার জন্য বিসিবিতে উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছি। পর্যটন নিয়েই আমার পড়াশোনা, ক্যারিয়ার। কাজটা আমি ভালো বুঝি। সে কারণেই আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজটা করতে চাই।”

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন